খুচরা বাজারে সরবরাহ না বাড়ায় সংকট কাটেনি সয়াবিন তেলের বাজারে। ক্রেতারা চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল পাচ্ছেন না। একই অবস্থা খোলা সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রেও। সুযোগ বুঝে একশ্রেণির ব্যবসায়ী লাগামহীনভাবে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, কোম্পানির ডিলাররা সয়াবিন সরবরাহের ক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতাদের অন্যান্য পণ্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে সয়াবিনের বাজার একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাজারদর নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। সংস্থাটির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ১৭ টাকা বেড়েছে। আর সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়েছে ৬ থেকে ৭ টাকা। তবে বাস্তবে দাম বেড়েছে আরো বেশি।
এদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, তাদেরকে সয়াবিন তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছে কোম্পানির ডিলাররা। এ অবস্থায় কেউ কেউ বাধ্য হয়ে তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ তা না মানায় দোকানে সয়াবিন তেল উঠাচ্ছেন না। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, কোনো কোম্পানি বোতলজাত সয়াবিন তেলের সঙ্গে তাদের পোলাওয়ের চাল, সুজি, আটা, ময়দা নিতে বলছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ঐ কোম্পানির সয়াবিন তেল বাদে অন্য পণ্যগুলোতে ক্রেতাদের আগ্রহ কম। এতে তাদের এই পণ্যগুলো বিক্রি হবে না, আটকে যাবে।
ফলে তাদের লোকসান গুনতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, তুরাগ এলাকার নতুন বাজার ও শান্তিনগরসহ বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিতে গেলে খুচরা বিক্রেতারা এসব তথ্য জানান। কাওরান বাজারের আল-আমিন ট্রেডার্সের বিক্রেতা রাসেল এ প্রসঙ্গে ইত্তেফাককে বলেন, কোম্পানির ডিলাররা চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল দিচ্ছে না। আবার কেউ কেউ তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। একই অভিযোগ করলেন তুরাগ এলাকার একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী সাদ্দাম হোসেনও। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, আর মাত্র এক মাস পরই পবিত্র রমজান শুরু হচ্ছে। এখন ভোজ্য তেলের বাজারে এই অস্থিরতার কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়বে।
সূত্র বলেছে, প্রতি বছরই রমজানের আগে ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে খুচরাবাজারে সরবরাহ কমিয়ে একধরনের অস্থিরতা তৈরি করে। এবারও তারা একই পথে হাঁটছেন। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দফায় দফায় আমদানি শুল্ক-কর কমিয়েছে। প্রথম দফায় গত বছরের ১৭ অক্টোবর এবং দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ক-কর কমিয়ে তা ৫ শতাংশে নামানো হয়েছে। এরপর ১৬ ডিসেম্বর ভোজ্য তেলের দাম সহনীয় রাখতে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমদানিতে শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি ও অগ্রিম আয়কর শতভাগ অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। এর পরও বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট কাটেনি।
এখন আবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ভোজ্য তেল পরিশোধন কারখানার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সংগঠনটি লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মতামত চেয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
চালের দাম কিছুটা কমেছে
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চালের দাম কিছুটা কমেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজার ও মোকামে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের চালের মধ্যে মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা কেজিতে ২ টাকা কমে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা কেজিতে এক টাকা কমে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকা ও সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট ৭০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চালের পাশাপাশি রাজধানীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ও আলুর দামও কমেছে।