সর্বজনীন পেনশনের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। ছয় মাস ধরে টানা কমছে নতুন গ্রাহক নিবন্ধন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত নির্বাচনের আগে ঘটা করে চালু করে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি। সরকার পরিবর্তনের পরে আর তেমন সাড়া মেলেনি।
কর্মসূচি চালুর আট মাস পর এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনকারীর সংখ্যা ১ লাখে পৌঁছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই থেকে কমতে শুরু করে নতুন গ্রাহক। জুলাইয়ে স্কিমে যুক্ত হয়েছে ২১ হাজার ৭০ জন। আগস্টে যুক্ত হয়েছে ১১ হাজার ৯৭০ জন। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কিমে গড়ে ৩০০ জন যুক্ত হয়। আর গত জানুয়ারি মাসে মাত্র ১৬৬ জন নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে।
ছয় মাস ধরে প্রতি মাসে সাড়ে ৫ কোটি থেকে ৭ কোটি টাকার মতো চাঁদা জমা পড়ছে। সব মিলিয়ে জানুয়ারি পর্যন্ত এই কর্মসূচিতে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ২২৪ জন গ্রাহক ১৫৪ কোটি ৫৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা জমা দিয়েছে।
প্রবাসীদের জন্য 'প্রবাস', বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য 'প্রগতি', স্বকর্মে নিয়োজিতদের জন্য 'সুরক্ষা' এবং স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য 'সমতা' এই চারটি ক্যাটাগরির স্কিম চালু করা হয়। তবে এক বছরের বেশি সময় পার হলেও অনেকে এখনো জানে না যে এই স্কিমের সুবিধা-অসুবিধা কী। পেনশন কর্তৃপক্ষ জানায়,
জনসাধারণকে অবহিত করতে প্রচারণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আগস্টের পর পেনশন স্কিমের গতি অনেকটা থেমে ছিল। এখন সেটা কাটতে শুরু করেছে। গত ১৪ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভায় অংশগ্রহণ বাড়াতে বিধিমালা পরিবর্তন করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশ কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ঐ সিদ্ধান্তের আলোকে শিগগিরই স্কিমগুলোর প্যাকেজে পরিবর্তন আসছে। এককালীন আনুতোষিক ও বিমা সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া সরকারি প্রকল্পে আবাসন সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো হবে। এমনকি কেউ মারা গেলে পুরো টাকা দেওয়ার সুযোগ আসতে পারে। এই স্কিমে যারা আছে এবং আগামী দিনে যারা যুক্ত হবে সবাই এসব সুবিধা পাবে বলে জানান সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
তারা জানান, এখন পর্যন্ত জমা টাকা শুধু ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। আগামী দিনে আবাসন, পাঁচতারা হোটেল, ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালসহ নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা আছে। বর্তমানে পেনশন স্কিমে ১২টি ব্যাংক এবং এমএফএসে নগদ ও বিকাশ রয়েছে। আরো ১০টি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। পেনশন স্কিমে ৯টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। আগস্টের পরেও একটি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। প্যাকেজের সুবিধা বাড়লে তখন সবাই যুক্ত হবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।