প্রতিদিনই বাড়ছে রাজধানীতে খোলা স্থানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। যে যার মতো সড়ক বা বাসাবাড়ির সামনে ময়লা ফেলে রাখছে। সড়কে খোলা ডাস্টবিন না থাকায় এটি চরম আকার ধারণ করেছে। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়ে দায় সারছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। বাসাবাড়ি থেকে এসব প্রতিষ্ঠান উচ্চমূল্যে ময়লা সংগ্রহ করলেও নেই কোনো জবাবদিহিতা। সিটি করপোরেশনের নজরদারি ও খোলা ডাস্টবিন না থাকায় রেস্টুরেন্ট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ির পরিত্যক্ত ময়লা-আবর্জনা বা উচ্ছিষ্ট কখনো সড়কে কখনো বা ফুটপাতে ফেলা হচ্ছে । এতে নষ্ট হচ্ছে শহরের সৌন্দর্য ও পরিবেশ। নগরবীদরা বলছেন, শহরে ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনার বিশেষ ধাপ হচ্ছে সড়কে ডাস্টবিন স্থাপন। ডাস্টবিন ছাড়া কোনোভাবেই একটি আধুনিক শহর কল্পনা করা যায় না।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, একজন মানুষ কোথায় ময়লা ফেলবে এই ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন করতে পারেনি। একবার কিছু ডাস্টবিন শহরে বসালেও সেগুলো সঠিক তদারকি ও মানুষকে কীভাবে সংযুক্ত করা যায় সেটি ব্যবস্থা না করায় সেগুলোর সুফল মেলেনি। ৫ আগস্টের পর তো শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পুরো টালমাটাল অবস্থা। সিটি করপোরেশনের উচিত এলাকাভিত্তিক ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা। দোকান, বাসাবাড়ির সামনে এগুলো স্থাপন করে সেখানকার বাসিন্দাদের দায়িত্ব দেওয়া। এতে মানুষ সচেতন হবে ও যত্রতত্র ময়লা ফেলার প্রবণতা কমবে।
সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ বলা হয়েছে, করপোরেশন নগরীর বিভিন্ন স্থানে ময়লা ফেলার পাত্র বা অন্য কোনো আধারের ব্যবস্থা করবে। করপোরেশন সাধারণ নোটিশ দিয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর ও জমির দখলদারদের তাদের ময়লা বা আবর্জনা উক্ত পাত্র বা আধারে ফেলার জন্য নির্দেশ দিতে পারবে। এই আইন অনুযায়ী, করপোরেশন নির্ধারিত স্থান থেকে ময়লা সংগ্রহ করে ভাগাড়ে নিয়ে যাবে। আর নাগরিকরা তাদের বাসাবাড়ির বর্জ্য করপোরেশনের নির্ধারিত পাত্রে পৌঁছে দেবে। কিন্তু দেখা গেছে, আশপাশে বড় ডাস্টবিনের ব্যবস্থা না থাকায় বাসাবাড়ির বর্জ্য কোনো নাগরিকই সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিতে পারে না। যে কারণে সিটি করপোরেশন বিভিন্ন ওয়ার্ডভিত্তিক সংগঠনকে নিবন্ধন দিয়েছে, যারা বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে করপোরেশনের নির্ধারিত পাত্রে পৌঁছে দেয়।
অন্যদিকে সড়কে কোনো ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলছে মানুষ। সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, মানিক মিয়া এভিনিউ, ধানমন্ডি, মতিঝিল, বনানী এলাকা ঘুরে কোনো ডাস্টবিন দেখা যায়নি। বাড়ির সামনে, রেস্টুরেন্টের সামনে কাগজ, প্যাকেটসহ নানা ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। সকাল বেলা সিটি করপোরেশনের ঝাড়ুদাররা সেগুলো পরিষ্কার করার কথা থাকলেও সেটিও ৫ আগস্টের পর নিয়মিত করা হচ্ছে না। কিছু এলাকায় একদিন করলে আরেক দিন করা হচ্ছে না। আগে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা এগুলো তদারকি করলেও তারা না থাকায় এখন সেগুলোও অনিয়মিত হয়ে গেছে।
এর আগে ২০১৬ সালে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কে ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় দুই সিটিতে ১১ হাজার ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়, যেগুলোর কোনো অস্তিত্বই নেই এখন। সংশ্লিষ্টদের দাবি, সিটি করপোরেশনের সঠিক তদারকি ও মানুষের অসচেতনতা এবং সর্বোপরি চুরির কারণে টেকসই হয়নি প্রকল্পটি। এরপর গত বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) গুলশানের বিভিন্ন সড়কে প্রায় ১০০টি স্মার্ট ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়। বলা হয়, এটি চুরির চেষ্টা করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম বেজে উঠবে। তবে বছর না ঘুরতেই এই ডাস্টবিনগুলোও ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেলেও নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সেগুলো প্রায় অকেজো এখন।
এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান ইত্তেফাককে বলেন, এ বিষয় নিয়ে আমরাও চিন্তিত। গত বছরে আমরা মিরপুর এলাকায় কিছু ডাস্টবিন স্থাপন করেছিলাম। কিন্তু দেখা গেছে অনেকে বাসাবাড়ির ময়লা এখানে নিয়ে এসে ফেলছে। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনার জন্য আমরা ভ্যান সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছি। কিছু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান সে ময়লা নিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা খুব শিগগিরই প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে ডাস্টবিন স্থাপন করার চিন্তা করছি। যেখানে বাসাবাড়ি বা দোকানপাটের ময়লা না ফেলা হয় সেটি খেয়াল রাখা হবে। আর কীভাবে কমিউনিটিকে সংযুক্ত করে এটির সুফল পাওয়া যায় সেটির জন্য কাজ করছি।
এ বিষয়ে জানার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশিরুল হক ও প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদারকে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।