ভ্যান ভাড়া বাবদ পাওনা ৪৫০ টাকা চাওয়ার কারণে ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে ধারালো ছুড়ি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয় ভ্যানচালক মিজানুর রহমান গাজীকে। পরে তার অটো ভ্যানটিকেও নিয়ে যায়। আদালত ও পুলিশের কাছে এমনই চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিয়েছে গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি শিবচর থানায় মিজানুর রহমান কাজী (২০) হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনায় করা মামলায় মূলহোতা মো: হান্নান শিকদারকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে শিবচর থানার তদন্ত টিম। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাকেসহ আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামি হান্নান শিবচর উপজেলার শিকদার হাট গ্রামের হুমায়ূন শিকদারের ছেলে। পেশায় তিনি একজন ইট ভাঙা শ্রমিক। গ্রেপ্তার অন্য আসামিরা হলেন- আরিয়ান আহমেদ স্বাধীন (২৪) এবং মো: আল আমিন (২৪)।
পুলিশ জানায়, জেলার শিবচর পৌরসভার কেরানীর বাট এলাকার নবীনূর বেপারীর ছেলে আরিয়ান আহমেদ স্বাধীনের কাছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মালামাল পরিবহনের ভাড়া ৪৫০ টাকা পেতো উমেদপুর ইউনিয়নের চরকাচিকাটা গ্রামের লাভলু গাজীর ছেলে ভ্যানচালক মিজানুর রহমান গাজী। পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রায়ই মিজানুরের সাথে স্বাধীনের কথা কাটাকাটি হতো। গত ৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) স্বাধীন তার বন্ধু দ্বিতীয়খন্ড ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামের হুমায়ুন শিকদারের ছেলে হান্নানকে দিয়ে কেরানীর বাট বেইলি ব্রীজ সংলগ্ন মিজানুরের ভাড়া বাসা থেকে মিজানুরকে পাঁচ্চর যাওয়ার কথা বলে ৫০০ টাকায় ভাড়া করে। হান্নান ভ্যানসহ মিজানুরকে কৌশলে কাদিরপুর ইউনিয়নের পবন মোড়লের চর কান্দি গ্রামের একটি ভুট্টা ক্ষেতের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল স্বাধীন ও তার বন্ধু কেরানীর বাট গ্রামের মামুন মিনার ছেলে আল আমিন।
মিজানুরকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথমেই স্বাধীন ধারালো ছুরি দিয়ে মিজানুরের গলায় আঘাত করে। আল আমিন ও হান্নান ধারালো ছুরি দিয়ে শরীরের অন্যান্য স্থানে আঘাত করে। এতেই মৃত্যু হয় ভ্যানচালক মিজানুরের। পরে মিজানুরের ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায় খুনিরা। শহরে এসে টাকার ভাগবাটোয়ারা করে চারজন মিলে। গ্রেপ্তার হান্নান শিকদার নগদ ৫০০ টাকা আর ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি ভাগে পায়। পরবর্তীতে অটোভ্যান বিক্রি করে সব টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এরপর সবাই যার যার বাসায় চলে যায়। হান্নান শিকদার পুলিশের ভয়ে তার নিকট থাকা ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি ভুট্টা ক্ষেতে ফেলে দেয়। পরদিন ৭ ফেব্রয়ারি (শুক্রবার) ভুট্টা ক্ষেতে মিজানুরের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দিলে তারা এসে লাশটি উদ্ধার করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ধারালো একটি ছুরি, নেশা গ্রহনের সরঞ্জাম ও আসামীদের পরিহিত একটি লাল রংয়ের জ্যাকেট উদ্ধার করে। পরবর্তীতে আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার দেখানো মতে ভুট্টা ক্ষেত থেকে ভিকটিম মিজানের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আসামি হান্নান শিকদারকে আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামি হান্নান বিচারকের নিকট ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয় এবং ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক তার জবানবন্দি প্রদান করে। গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামি স্বাধীন এবং আল আমিনকে আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।