ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের খিলা ইউনিয়ন পরিষদ। আধপাকা জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে চলছে ইউনিয়ন পরিষদটির কার্যক্রম। জরাজীর্ণ এ আধপাকা টিনশেড ঘরটি বর্তমানে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন এখানে কর্তব্যরত কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা। যে কোন সময় ধসে পড়ার আশংকার কথা জানান এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খিলা ইউপির আধপাকা এ টিনশেড ঘরটির দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে, জং ধরে ছিদ্র হয়েছে টিন, ঘুণে ধরেছে কাঠের তৈরি সকল সামগ্রীতে। নড়বড়ে এ অবকাঠামোটি প্রায় দেড় যুগ আগ থেকেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন এলাকাবাসী। নতুন ভবন না হওয়ায় জোড়াতালি দিয়ে বছরের পর বছর মেরামত করেই চালিয়ে নেয়া হয়েছে এ ইউনিয়ন পরিষদটির কার্যক্রম। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পরিষদটি জনরোষের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এখানে হামলা, ভাংচুর করা হলে এতে অবকাঠামো আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। নষ্ট হয়ে যায় অফিসের কাগজপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ নথি, অফিসের কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার কথা জানান কর্তৃপক্ষ। জরাজীর্ণ এ ভবনের দুটি কক্ষে দায়সারাভাবে কর্মকর্তাদের নাগরিক সেবা প্রদান করতে দেখা গেছে।
জানা যায়, ১৯৬০ সালে ইউনিয়ন পরিষদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতেই টিনশেড দিয়ে তৈরি একটি ঘরে শুরু হয় এর কার্যক্রম। পরবর্তীতে অবকাঠামোগত পরিবর্তন এনে চারপাশে ইটের গাঁথুনির উপর চারকক্ষ বিশিষ্ট এ আধপাকা টিনের ঘরটির দু’কক্ষের উপর দেয়া হয় ছাদ, দুটি কক্ষে টিনের চালা দিয়েই তৈরি হয় অবকাঠামো। বর্তমানে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে দু’টি কক্ষ ব্যবহার একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাকি দুটি কক্ষে কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে দাপ্তরিক কার্যক্রম। ফলে ইউনিয়ন পরিষদটিতে দেখা দিয়েছে কক্ষ সংকট। এদিকে খসে পড়ছে পরিষদটির ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তরা। বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে পরিষদটিতে ক্ষুদ্র মেরামতের কাজ করা হলেও নির্মাণ হয়নি ভবন। এমন প্রতিকুল পরিবেশে প্রতিনিয়ত দাপ্তরিক কাজ সামলাতে নিয়মিত হিমশিম খাওয়ার কথা জানান কর্তৃপক্ষ।
অত্র ইউপির দিশাবন্ধ গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুরুল আলম মজনু দীর্ঘ ৬৪ বছরেও পরিষদটির একটি ভবন নির্মাণ না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন এখানে একটি ভবন সংকটে এ ইউনিয়নের বাসিন্দারা বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পূর্ব-পশ্চিমে ৫ কি.মি. লম্বা এই ইউনিয়ন পরিষদটির কার্যালয় অত্র ইউনিয়নের শেষ মাথায় অবস্থিত। এটি উপজেলার সদর ইউনিয়ন হলেও প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইউনিয়নটির পশ্চিম প্রান্তের বাসিন্দারা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কি.মি. দুরে সেবা নিতে এসে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়েন। এতে অর্থ ও সময় দুটোই তাদের অপচয় হয়। এ বৈষম্য নিরসনে এ ইউনিয়নের মাঝামাঝি জায়গায় একটি ভবন নির্মাণ করে এ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জনদুর্ভোগ থেকে মুক্তির দাবী জানান তিনি।
খিলা ইউনিয়ন পরিষদটির বেহাল দশার কথা উল্লেখ করে ইউপি সচিব মজিবুর রহমান বলেন, এখানে জনবল অবকাঠামো অনুযায়ী ৭টি দপ্তরের কর্মকর্তাদের আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরটির একটি কক্ষে চেয়ারম্যান ও আরেকটি কক্ষে দায়সারাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করেন পরিষদের কর্মকর্তারা। এখানে নেই গ্রাম আদালতের এজলাস কক্ষ, গুদাম ঘর। পরিত্যক্ত একটি কক্ষে রেখে বিতরণ করা হয় সরকারি ত্রাণসহ যে কোন সামগ্রী। জরাজীর্ণ এ পরিষদের অফিসকক্ষে নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে থাকে প্রয়োজনীয় নথি। বর্ষাকালে ঝড় বৃষ্টিতে প্রতিকুল পরিবেশে যে কোন সময় পরিষদের অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়ে দুর্ঘটনার আশংকা করেন তিনি।
পরিষদটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহআলম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পরিষদের অনেক পুরানো অবকাঠামোটি বর্তমানে জীর্ণদশায় পরিণত হয়েছে।
পুরো পরিষদটিই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রীতিমত বিড়ম্বনায় পড়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে এখানে বসে অফিস করাটাও দুষ্কর। এটি এখন সংস্কারেরও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পরিষদের ভবন নির্মাণের জন্য এখানে পর্যাপ্ত জায়গার সংকট রয়েছে। পরবর্তীতে ভূমি অধিগ্রহণ সাপেক্ষে ইউনিক ডিজাইনের নতুন ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান তিনি।
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহরিয়া ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, তিনি খোঁজ খবর নিয়েছেন। এখানে একটি ভবনের অবশ্যকতা উল্লেখ করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।