রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

অপহরণের ১৭ দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরলেন সুন্দরবনের দশ জেলে

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০১

সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর থেকে অপহরণের ১৭ দিন পর মাথাপিছু দুই লাখ ৮৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন দশ জেলে। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাত ৩টার দিকে তারা বাড়িতে পৌঁছান।

এর আগে বুধবার রাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ এলাকায় গহীন বন থেকে উপরে উঠিয়ে দিয়ে যায় জলদস্যুরা।

মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা জেলেদের মধ্যে ৭ জনের বাড়ি আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নে। দুইজনের বাড়ি শ্যামনগরে ও আরেকজনের বাড়ি খুলনার কয়রায়।

ফিরে আসা জেলেরা হলেন, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রাকাটি গ্রামের মো. দাউদ আলী সানার ছেলে অজাহারুল ইসলাম, রুইয়ারবিল গ্রামের জুলফিকার সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন, একই গ্রামের শহর আলী গাজীর ছেলে হাফিজুর রহমান, আব্দুল হক সানার ছেলে মো. শাহীনুর আলম, দিঘালারাইট গ্রামের মো. আবু দাউদ জদ্দারের ছেলে মো. রাসেল, শ্রীপুর গ্রামের মো. রুহুল আমিন ঢালির ছেলে মো. শাহাজান ঢালী ও দৃষ্টিনন্দন গ্রামের মো. আনিচ সরদারের ছেলে নুরে আলম এবং শ্যামনগর উপজেলার বন্যতলা গ্রামের আবু তালেব এর ছেলে শাহ্ আলমসহ ১০ জন।

এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি দুবলার চর এলাকা থেকে মুক্তি পাওয়া দশ জেলেসহ মোট ১৫ জেলেকে অপহরণ করা হয়। মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় বাকি পাঁচজনকে এখনও আটকে রাখা হয়েছে। 

এই ১৫ জেলে আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও চাকলা জেলে সমিতির সভাপতি আবদুর রউফের নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। ২৬ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরের বাহির সমুদ্রের ৮ নম্বর বয়া এলাকা থেকে আবদুর রউফের ১৭টি ফিশিং বোট (মাছ ধরার নৌকা) থেকে ১৫ জেলেকে তুলে নিয়ে যায় জলদস্যুরা।

আবদুর রউফ সাংবাদিকদের জানান, ২৬ জানুয়ারি রাতে জেলেদের অপহরণের সময় বনদস্যুরা যোগাযোগের জন্য একটি মুঠোফোন নম্বর দিয়ে যায়। ওই নম্বর পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ৩১ জানুয়ারি সকালে খোলা পাওয়া যায়। ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে জনপ্রতি মুক্তিপণ তিন লাখ টাকা দাবি করে তারা। তবে টাকা কোন স্থানে ও কখন পৌঁছে দিতে হবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

ফিরে আসা জেলে সুভদ্রাকাটি গ্রামের আজাহারুল ইসলামের বাবা দাউদ সানা বলেন, অপহরণের কয়েক দিন পর ৫ ফেব্রুয়ারি বনদস্যু দয়াল বাহিনীর প্রধান দয়াল তাদেরকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কয়েকটি নম্বর দিয়ে বলেন, এসব নম্বরে মাথাপিছু তিন লাখ টাকা পাঠাতে। তার বনদস্যু বাহিনীর সঙ্গে তিন থেকে চার দিন দেনদরবারের পর ১০ জনের জন্য মাথাপিছু ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে মোট ২৮ লাখ টাকা পাঠানোর পর ১০ জেলেকে চোখ বেঁধে সুন্দরবনের মুন্সিগঞ্জ এলাকায় নামিয়ে দিয়ে যায়।

এদিকে যাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়নি তারা হলেন- আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের  শাহাজাহান গাজী, বাগেরহাটা জেলার রামপাল উপজেলার ইসলামাবাদ গ্রামের মো. মতিয়ার সরদার, একই উপজেলার কাশিপুর গ্রামের খান রফিক, মংলা উপজেলার চিলা গ্রামের নাথন বিশ্বাস ও খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার শশিমনগর গ্রামের রিপন মোড়ল।

প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী তার ইউনিয়নের সাতজন জেলে ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাকিদের কাছে নৌকা থাকায় এবং মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ না হওয়ায় ডাকাতরা তাদেরকে ছাড়েনি।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা এ.বি এম হাবিবুর ইসলাম জানান, ১৫ জেলেদের মধ্যে দশজন জেলে বাড়ি ফিরেছে বলে শুনেছি। তারা এখনও পর্যন্ত আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি।

ইত্তেফাক/এপি
 
unib