পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মারমারির ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছেন বিএনপিপন্থী ও জামায়াতপন্থী দুজন আইনজীবী। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এবং বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা দুটি দায়ের হয়।
এদের মধ্যে একটি মামলার বাদী জামায়াতপন্থী আইনজীবী ও পটুয়াখালী জেলা জজ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. রুহুল আমীন সিকদার। অন্যটির বাদী পটুয়াখালী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য ও জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌসুলী (এপিপি) অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান।
অ্যাডভোকেট মো. রুহুল আমীন সিকদারের মামলায় আসামিরা হলেন- মো. মাহবুবুর রহমান সুজন (৩৯), মো. মিজানুর রহমান (৪৮), এস.এম তৌফিক হোসেন মুন্না (৪১), মো. আরিফ হোসেন (৪৫), মো. সাহাবুদ্দিন (সাবু) (৪৪), মো. আরিফুর রহমান রিয়াজ (৪৪), মো. নাজমুল আহসান মুন্না (৪৮), মো. মজিবুল হক বিশ্বাস রানা (৪২), শরীফ মো. সালাহউদ্দিন, মো. ইমরান হোসেন বাদল (৪০), মো. আবু জাফর খান (৫০)।
অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমানের মামলায় আসামিরা হলেন- মো. রুহুল আমিন সিকদার (৩৫), পটুয়াখালী জেলা জামায়াতে আমির আইনজীবী নাজমুল আহসান (৫৮), জামায়াতের ল‘ইয়ার্স কাউন্সিলের পটুয়াখালী জেলা শাখার সেক্রেটারি মো. আবু সাঈদ খান শামীম (৪৫) এবং জামায়াতপন্থী আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন (৪৫), মো. মহিউদ্দিন (৪২), মো. নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী (৩৫) মো. তাওহীদুর রহমান (৩৩), মো. মোর্শেদুজ্জামান সাজন (৩০), মোহাম্মদ আলী (৩৫), গাজী মো. হুমায়ূন কবির (৫০) প্রফেসর কায়সারী (৪৮)। এছাড়াও মামলায় ১০ থেকে ১৫ জন অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
বিএনপিপন্থী আইনজীবী মো. মিজানুর রহমান মামলায় উল্লেখ করেন, ১১ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী জেলা আইনীবী সমিতির ২০২৫-২০২৬ কার্যনিবাহী কমিটির নিবার্চন উপলক্ষ্যে মনোনয়নপত্র কেনা এবং জমা দেওয়ার দিন ছিলো। ফরম ক্রয়-বিক্রয় শুরু হলে পটুয়াখালী জেলা জামায়াতের আমির আইনজীবী নাজমুল আহসান দলীয় আইনজীবী ও বহিরাগতদের নিয়ে বিভিন্ন পদে ৬টি মনোনয়ন পত্র ক্রয় করে জমা দেন। ফরম বিক্রয়ের সময় শেষ হওয়ার পর পুনরায় ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীপন্থী আইনজীবী পরিষদের সক্রিয় সদস্য আইনজীবী মো. মহিউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে ফরম ক্রয়ের কথা জানান। এসময় সাধারণ ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা ফরম ক্রয়-বিক্রয়ে দ্বিমত জানালে জামায়াতের জেলা আমির আইনজীবী মো. নাজমুল আহসানের নির্দেশে আসামিরা বাদী ও স্বাক্ষীদের মরাধর করে জখম করে। হামলার সময় বাদী ও স্বাক্ষীদের মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
জামায়াত ইসলামপন্থী মো. রুহুল আমীন সিকদার মামলায় উল্লেখ করেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ল'ইয়ার্স কাউন্সিল, পটুয়াখালীর পক্ষে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক, লাইব্রেরী সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক ও সদস্য পদে বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামের প্যানেলের বিজ্ঞ আইনজীবীরা মনোনয়ন ফরম নিতে যান। এক পর্যায়ে অ্যাডভোকেট মো. মহিউদ্দিন সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নির্ধারিত টাকা জমা দিয়ে ফরম কিনতে গেলে ওই পদে বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমর্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শরীফ মো. সালাহউদ্দিনসহ অন্যান্যরা তাকে ফরম সংগ্রহে বাধা দেয়। সেই সঙ্গে ফরম সংগ্রহে প্রত্যাশী ও সাক্ষীদের বাধা দেয় এবং তাদের ওপর চড়াও হয়।
জেলা জামায়াতের আমির আইনজীবী মো. নাজমুল আহসান বলেন,‘গত ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে কে কাকে হামলা ও মারধর করেছে,তার ভিডিও চিত্র দেশবাসী দেখেছেন, এখানে লুকানোর কিছু নাই। অপরাধীদের অপরাধ ঢাকার জন্য বিএনপির পন্থী আইনজীবীরা একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন, যা ভিত্তিহীন’।
এ বিষয় জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড.মোজাম্মেল হোসেন তপন বলেন, ‘একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট নাজমুল আহসানের সঙ্গে কথা বলে একটা মীমাংসা করে দিয়েছি। তবে এরপরও মামলা হবে এমনটা প্রত্যাশিত ছিল না। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত বোধ করছি।’
পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইমতিয়াজ আহম্মেদ বলেন, ‘পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় প্রথমে জামায়াতপন্থী একজন আইনজীবী ১১ ফেব্রুয়ারি একটি মামলা করেন। এর একদিন পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপিপন্থী একজন আইনজীবীরা আরও একটি মামলা করেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। দুই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’