কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকে ৫ বাংলাদেশিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সোয়া ২টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙা ইউনিয়নের পশ্চিম বালাতারী সীমান্তের বারোমাসিয়া নদীর ধারে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার সীমান্তে জড়ো হয়ে বিএসএফের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় সীমান্তবাসীরা। সীমান্তের ওপারেও ভারতীয় নাগরিকদের জড়ো হতে দেখা গেছে। পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দল গিয়ে বাংলাদেশিদের সরিয়ে দেয়।
তবে বিজিবির দাবি, বিএসএফ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কিনা এবং কাউকে মারধর করেছে কিনা তা প্রাথমিক অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঠিক কী নিয়ে সীমান্তের দুই পোড়ে স্থানীয়রা জড়ো হয়েছিলেন তাও নিশ্চিত হতে পারেনি বিজিবি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে বিজিবি।
শুক্রবার বিকালে পশ্চিম বালাতারী সীমান্তে গিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের পাঁচজন বাংলাদেশিকে ভারতীয় ১৩৮ ব্যাটালিয়নের নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের বিএসএফের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তারা হলেন শামসুল হক (৬১), জাবেদ আলী (৫৭) কাশেম আলী (৪৯), রিপন মিয়া (৩৪) এবং তাজুল ইসলাম (৪১)।
মারধরের শিকার পশ্চিম বালাতারী গ্রামের বাসিন্দা শামসুল হক জানান, জুম্মার নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হয়ে বারোমাসিয়া নদীর পারে চিল্লাচিল্লি শুনতে পাই। একটু এগিয়ে গেলে হঠাৎ চার পাঁচজন বিএসএফ সদস্য বাংলাদেশের জায়গায় ঢুকে আমার দিকে তেড়ে আসে। একজন রাইফেল তুলে মারতে ধরলে আমি রাইফেল ধরে ফেলি। তখন আরেকজন লাঠি দিয়ে আমার হাতে ও চরুতে (উরুতে) মার দেয়। এ সময় আমার সাথে বেলাল ও জাবেদ ছিল। জাবেদকেও মারধর করে বিএসএফ।’
কেন মারধর, এমন প্রশ্নে শামসুল বলেন, সেটা তো বুঝতে পারি নাই। নামাজ শেষে আমি চিল্লাচিল্লি শুনে নদীর পাড়ে গিয়েছি। তারা কেন এসে মারধর করলো তা জানি না। তবে ওদের দিকেও লোকজন জড়ো হইছিল। তাদেরকেও বিএসএফ মারছে। কী হইছিলো তা জানি না।’
শামসুল ও জাবেদকে মারতে দেখেছেন বারোমাসি নদীর তীরে বসে থাকা স্থানীয় নারী মঞ্জু বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি বাড়ির পাশে নদীর ধারে বসি ছিলাম। হঠাৎ দেখি বিএসএফ বাংলাদেশে ঢুকছে। এ সময় শামসুল ভাই তাদের বললো তোমরা এখানে আসছেন কেন? তোমরা যাও, দাদা যাও। এই কথা বলার সাথে তাকে ধরি মারছে। হামরা দৌঁড়ে বাড়ি আসছি।’
বিএসএফের এমন আচরণে এলাকাবাসী সীমান্ত সংলগ্ন স্থানে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। খবর পেয়ে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন গোরকমন্ডল ক্যাম্পের হাবিলদার দেলবর হোসেনসহ পাঁচ ছয়জন বিজিবি সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা এলাকাবাসীকে নিবৃত করে সরিয়ে দেন।
কোনো ধরনের উস্কানি ছাড়াই বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশে ঢোকার কারণ জানতে সীমান্ত সংলগ্ন কয়েকজন এলাকাবাসীর সাথে কথা হয়। তারা জানান, ভারতের সাহেবঞ্জ থানাধীন নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের কয়েকজন বিএসএফ সদস্য সীমান্ত পিলার ৯৩০ এর ৮ এস পিলারের কাছে আসেন। তখন তারা সম্ভবত ভুলে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। এ সময় ওই স্থানে কয়েকজন বাংলাদেশিকে দেখতে পেয়ে তারা মারধর করেন।
স্থানীয়দের দাবি, কয়েকদিন ধরে তারা শুনছিলেন ওপারে বিএসএফ সদস্যরা নতুন এসেছেন। তারা হয়তো এখনও সীমান্ত এলাকা সম্পর্কে ভালো বুঝে উঠতে পারেননি। তবে তাদের এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তে যাওয়া এক চোরাকারবারিকে ধাওয়া করতে গিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করেন বিএসএফের পাঁচ সদস্য। এ সময় কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে মুখোমুখি হলে তাদেরকে ওই চোরাকারবারির সহযোগী ভেবে মারধর করে তারা। তবে এ তথ্যের সমর্থনে সীমান্তবাসীর কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাকিল আলম জানান, বিএসএফ আদৌ বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুরো বিষয় নিয়ে আমরা গুরুত্ব সহকারে অনুসন্ধান করছি। বিজিবির টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে সরিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তারপরও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।