সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সারা বিশ্বেই প্রসারিত হচ্ছে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহার বাড়ছে। ফলে ঘরে বসেই এখন অনলাইনে কেনা যায় পছন্দের পণ্য।
চাল, ডাল থেকে শুরু করে পোশাক-আশাক, দামি ফোন, ফ্রিজ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি সবই এখন কমবেশি অনলাইনে কেনা যায়। এমনকি দেশে বসে অনলাইনে বিদেশ থেকেও পণ্য কেনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কী পরিমাণ ব্যবসা করছে, প্রথমবারের মতো তার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ অনুসারে, দেশের ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৭৮টি প্রতিষ্ঠান নিজেদের সেবা ও পণ্য বেচাকেনা, লেনদেনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অনলাইন প্ল্যাটফর্মে করে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা, দেশের মধ্যে অনলাইনে পণ্য কিনলে এক-দুই দিনের মধ্যে তা হাতে পৌঁছে যায়। আবার দৈনন্দিন জীবনে মানুষের যাতায়াতকে সহজ করে দিয়েছে পাঠাও-উবারের মতো অনলাইননির্ভর সেবা। সব মিলিয়ে অনলাইননির্ভর ব্যবসা দিন দিন বাড়ছে। আর ব্যবসার বিস্তার বাড়তে থাকায় আর্থিক লেনদেন সহজ করতে অনলাইন ব্যাংকিংয়েরও বিস্তার ঘটছে।
অনলাইননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য ই-কর্মাস ও এফ-কমার্স হিসেবে এরই মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক শুমারির উপপ্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, 'দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। পণ্য কেনাবেচা থেকে শুরু করে রাইড শেয়ারিং, পার্সেল সেবা পেতেও এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন গ্রাহকরা। এবারই প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক শুমারিতে এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান তুলে আনা হয়েছে।'
বিবিএস বলছে, বর্তমানে দেশের ৫৭ হাজার ১৭৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে সেবা দেয়। যা মোট প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪৯ শতাংশ। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রাইড শেয়ারিং, পার্সেল, কেনাকাটা সেবা ইত্যাদি। এ ধরনের একটি সেবা পাঠাও। দেশের অন্যতম সফল ও বড় সেবাভিত্তিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এটি। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১০ বছরেই এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাঠাওয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, পাঠাও অ্যাপসের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় সাত কোটি রাইড বা পরিবহণ সেবা দেওয়া হয়েছে।
এ সেবা চালু হওয়ায় লাখ লাখ মানুষের বিকল্প আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। দেশের বেকার যুবকদের অনেকের কাছে এখন রাইড শেয়ারিং সেবা আয়ের বিকল্প উৎস হয়ে উঠেছে। তথ্য বলছে, শাড়ি-জামা, প্যান্ট-শার্ট, গয়নাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যও এখন অনলাইনে বিক্রি করেন অনেক উদ্যোক্তা।
বিবিএসের অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য অনুযায়ী অনলাইনে পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৫ হাজার ৬১। এ সংখ্যা অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৮ শতাংশ। আবার অনলাইনে গাড়ি-জমি, ফ্ল্যাট বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম নয়। বিবিএস বলছে, দেশে এ ধরনের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আছে ৬ হাজার ৬৭৫টি।
এছাড়া ১৯ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পণ্য-সেবা বেচাকেনায় অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা দিয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, কোনো উদ্যোক্তা তার শোরুমের পোশাক অনলাইনে ক্রেতার কাছে বিক্রি করলেন। ক্রেতা ওই পণ্যের মূল্য পরিশোধ করলেন অনলাইন ব্যাংক বা মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। পণ্যের মূল্য সরাসরি পরিশোধে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক কার্ডও ব্যবহার করেন ক্রেতারা। এ ধরনের সেবাকে অনলাইন ব্যাংকিং হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে বিবিএসের পরিসংখ্যানে।
বিবিএসের অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য অনুযায়ী, ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অনলাইন সেবা দেয়, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। ঢাকায় এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৪৭৪টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সেখানে অনলাইনে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২ হাজারের বেশি। আর খুলনায় এই ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার।