ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানাতে এবার তিস্তা রেলসেতু লালমনিরহাট ও কাউনিয়া প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ তিস্তা নদীর হাঁটু পানিতে নেমে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৮ ফ্রেরুয়ারি) বেলা ১টার দিকে তিস্তা নদীতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রর্দশন কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা।
এসময় ভারতের পানি আগ্রাসন বন্ধ করা, মরুকরণ থেকে নদী রক্ষায় তিস্তা পানির ন্যায্য হিস্যা প্রদান এবং বন্যা ভাঙ্গন থেকে তিস্তাপাড়ের মানুষকে রক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে প্ল্যাকার্ড প্রর্দশন করা হয়। পাশাপাশি 'তিস্তা নদী আমার মা, মরতে আমরা দিব না'; ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’সহ নানা শ্লোগান দিতে দেখা গেছে তাদের।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় তিস্তা রেলসেতু লালমনিরহাট পয়েন্ট থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর নেতৃত্বে পদযাত্রাটি তিস্তা সড়ক সেতু হয়ে তিস্তা রেলসেতু কাউনিয়া পয়েন্ট গিয়ে শেষ হয়। সেখান থেকে পদযাত্রাটি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ড হয়ে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
পরে বিশ্ববাসীকে তিস্তা নদীর পানির গভীরতা দেখাতে নদীর হাঁটু পানিতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন তারা।
এ কর্মসূচি ঘিরে মূলত সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে বাস, ট্রাক, মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে আসতে শুরু করে হাজারো মানুষ। কেউ কেউ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন পায়ে হেঁটে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে এ আন্দোলনে যোগ দিতে দেখা গেছে। পাল্লা দিয়ে যুক্ত হন নারীরাও। সেখানে দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা সভা, নাটক, লোকজ গান। রাতে বালুচরে বিছানা পেতে রাত্রিযাপন করেন। নিজেরা চাল-ডাল সংগ্রহ করে রান্না করে দুপুর ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেন। তিস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে করা হয় শত শত তাঁবু।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারত উজানে বাঁধ নির্মাণ করায় তিস্তার পানির প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, আর এর ফলে বাংলাদেশের কৃষি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না পেয়ে হাজার হাজার কৃষক ও সাধারণ মানুষ ক্ষতির মুখে পড়ছেন। ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে লাখ লাখ মানুষকে দুর্দশার মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
আন্দোলনে যুক্ত হওয়া কৃষক মো. আব্দুল সামাদ বলেন,‘ভারতের আগ্রাসন রুখতে এখনই আমাদের সোচ্চার হতে হবে, নইলে ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।’
আন্দোলনে আসা শিক্ষার্থী কাইয়ুম হোসেন বলেন, ‘শুকনা মৌসুমে আমরা ন্যায্য পানি পাচ্ছি না। যখন আমাদের পানি প্রয়োজন হয় না তখন ইন্ডিয়া আমাদের পানি দিয়ে প্লাবিত করে দেয়। আন্দোলন করার একটাই উদ্দেশ্য হলো, আমাদের পানির দরকার।’
মূলত তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে বিশ্ব জনমত গঠনে শুরু হয় দুদিন ব্যাপী এই কর্মসূচি। কর্মসূচি ঘিরে নীলফামারী থেকে গাইবান্ধা পর্যন্ত ১১টি স্থানে মঞ্চ ও তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোমবার দুপুর ২টায় তিস্তা পাড়ের প্রধান সমাবেশে উপস্থিত হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় তিনি কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন ঘোষণা করেন। তাছাড়া দুই দিন ব্যাপী প্রতিটি স্থানে সরাসরি উপস্থিত থাকবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। তারা সেখানে অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেবেন। মঙ্গলবার সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। সেখানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।