বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

১০ দিন বাথটাবে শুয়ে আয় সাড়ে ৬ লাখ টাকা, স্বেচ্ছাসেবক খুঁজছে ইএসএ  

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৮

নিরবচ্ছিন্নভাবে ১০ দিন বিছানায় শুয়ে থাকা অনেকের কাছেই অলস সময় কাটানোর একটি স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে। তবে, যদি এই সময়ে আয় করা যায় প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, তাহলে বিষয়টি আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ) এমনই একটি গবেষণা পরিচালনা করছে, যেখানে স্বেচ্ছাসেবকদের ১০ দিন ধরে একটি বিশেষ পানিভর্তি শয্যায় শুয়ে থাকতে হবে।  

কীভাবে কাজ করবে এই গবেষণা?  

ইএসএর নতুন এই গবেষণা প্রকল্পের নাম "ভিভাল্ডি III", যা অনুষ্ঠিত হবে ফ্রান্সের তুলুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতাল মেডেস স্পেস ক্লিনিকে। এই পরীক্ষার মূল লক্ষ্য হলো, মহাকাশে ভ্রমণের ফলে মানবদেহে কী ধরনের পরিবর্তন আসে, তা বিশ্লেষণ করা।  

পরীক্ষার আওতায় স্বেচ্ছাসেবকদের বাথটাবের মতো পানিভর্তি বিশেষ শয্যায় শুইয়ে রাখা হবে। তাদের শরীর প্রায় সম্পূর্ণ পানির নিচে থাকবে, তবে মাথা ও হাত উন্মুক্ত থাকবে। এতে অংশগ্রহণকারীরা একপ্রকার শূন্য-মাধ্যাকর্ষণ পরিবেশ অনুভব করবেন, যা নভোচারীদের মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানকালে হওয়া শারীরিক পরিবর্তনের অনুরূপ বলে মনে করা হয়।  

স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য শর্ত ও সুযোগ-সুবিধা  

ইএসএ জানিয়েছে, গবেষণায় ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবকদের নেওয়া হয়েছে, যাদের উচ্চতা ১.৬৫ থেকে ১.৮০ মিটার এবং বডি মাস ইনডেক্স (BMI) ২০ থেকে ২৬-এর মধ্যে হতে হবে। এ ছাড়া, অংশগ্রহণকারীদের কোনো অ্যালার্জি বা বিশেষ খাদ্যাভ্যাসজনিত সমস্যা থাকা চলবে না।  

এই পরীক্ষাটি ২১ দিনব্যাপী চলবে। প্রথম পাঁচ দিন চলবে প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা। এরপর ১০ দিন ধরে অংশগ্রহণকারীরা নিরবচ্ছিন্নভাবে পানিভর্তি শয্যায় শুয়ে থাকবেন। শেষ পাঁচ দিনে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।  

স্বেচ্ছাসেবকদের সুবিধার জন্য গবেষণা চলাকালে তারা ফোন ব্যবহার করতে পারবেন এবং পরিবারের সঙ্গে ভিডিও বা অডিও কলে কথা বলতে পারবেন। তবে, হাসপাতালে আত্মীয়-স্বজনের প্রবেশ অনুমোদিত নয়।  

গবেষণার চ্যালেঞ্জ  

এই পরীক্ষার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো টানা ১০ দিন একই ভঙ্গিতে শুয়ে থাকা। বাথরুম ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ট্রলিতে স্বেচ্ছাসেবকদের স্থানান্তর করা হবে, যাতে তাদের শোয়া অবস্থান বজায় থাকে। খাবার গ্রহণের সময় তাদের একটি বিশেষ ভাসমান বোর্ড ও নেক পিলো ব্যবহার করতে হবে।  

কেন এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ?  

ইএসএর মানব অনুসন্ধানবিষয়ক বিজ্ঞানী অ্যান-কাথরিন ভ্লাসিল বলেছেন, 'ড্রাই ইমার্শনের সময়সীমা বাড়িয়ে এবং এটি বিছানায় শুয়ে থাকার অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে আমরা বুঝতে চাই, মহাকাশে জীবনযাত্রা কীভাবে শারীরিক পরিবর্তন ঘটায় এবং কীভাবে এসব প্রভাব পরস্পরকে পরিপূরক করে।' 

এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল মহাকাশ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করবে। মহাকাশে দীর্ঘ সময় ওজনহীন অবস্থায় থাকলে পেশি ও হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, চোখের গঠন পরিবর্তিত হতে পারে এবং শরীরের তরল উপরের দিকে সঞ্চালিত হয়। এই গবেষণার মাধ্যমে এসব পরিবর্তন সম্পর্কে আরও গভীর বিশ্লেষণ করা হবে।  

এ ছাড়া, গবেষণার ফলাফল দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকা রোগী, বয়স্ক ব্যক্তি ও হাড়জনিত সমস্যায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে।  

"ভিভাল্ডি III" প্রকল্পটি এর আগের দুই ধাপের ধারাবাহিকতায় পরিচালিত হচ্ছে এবং এটি সফল হলে ভবিষ্যতে আরও উন্নত মহাকাশ গবেষণা চালানো সম্ভব হবে। ইএসএ আশা করছে, এই পরীক্ষার মাধ্যমে মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানোর সম্ভাব্য শারীরিক প্রভাবগুলো আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।  

তথ্যসূত্র: ডেইলি মেইল

 

ইত্তেফাক/টিএইচ