নতুন করে আবারও আলোচনায় বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জ। ১৯৯৬ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত টানা ৩০ বছর কোনো না কোনো কারণে দেশ জুড়ে আলোচনায় ছিল নারায়ণগঞ্জ। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লি এলাকার একটি বাড়ি থেকে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী তার অপর পাঁচ সহযোগীসহ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। এর মধ্য দিয়ে নতুনভাবে আলোচনায় আসে নারায়ণগঞ্জ।
১৯৯৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা টানা ২২ দিনের সরকারবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে জেলার বিভিন্ন স্থানে ২২টি তাজা প্রাণ ঝরে পড়ার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ ঐ সময় ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। এরপর থেকে একের পর এক নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সারা দেশে ভিন্নভাবে পরিচিতি পায়। নারায়ণগঞ্জের কপালে সন্ত্রাসের জনপদের তীলক জোটে।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ত্বকী হত্যাকাণ্ড, আলোচিত সাত খুন, পাঁচ খুন, ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিক লিটু অপহরণসহ নানা কারণে দেশ জুড়ে আলোচিত এই জেলা।
শুধু অপরাধ নয়, নারায়ণগঞ্জে আলোচিত-সমালোচিত সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর কারণেও নারায়ণগঞ্জকে দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরের মানুষও চেনে। এ দুই আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কথা কার না জানা।
২০০১ সালের ১৬ জুনে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে ভয়াবহ বোমা হামলায় ২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় নারায়ণগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ৮ মার্চ তার লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খালে। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে অপহরণ হয় নাসিকের তৎকালীন প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম বাবুসহ সাত জন। তিন দিন পর তাদের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তিরচর এলাকার তীরে। তবে সাত খুনের আগে ঐ বছরের ১৬ এপ্রিল দুপুরে একই স্থান থেকে অপহরণ হন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানের স্বামী ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিক লিটু। দুই দিন পর তিনি মুক্তি পেলেও আজও জানা যায়নি ঐ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত ছিল। এরপরেই ঘটে নগরের বাবুরাইল এলাকায় পাঁচ খুনের ঘটনা। এ রকম অসংখ্য ঘটনা নারায়ণগঞ্জকে প্রতিনিয়ত দেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে।
সর্বশেষ মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হলে আবারো আলোচনা শুরু হয় নারায়ণগঞ্জ নিয়ে। কেন আরসা প্রধান নারায়ণগঞ্জে এমন প্রশ্ন নগরবাসীর মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে।
কেন বারবার অপরাধীরা নারায়ণগঞ্জকেই বেছে নেয় এমন প্রশ্নের জবাবে অপরাধ নিয়ে কাজ করেন প্রশাসনের এমন একজন বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পূর্বাঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ। রাজধানীতে প্রবেশের আগে অনেক অপরাধী আগে এই জেলায় অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। এরপরেই রাজধানীতে প্রবেশ করে। ভৌগোলিক কারণে যেমন দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের গুরুত্ব অপরিসীম, ঠিক তেমনি অবস্থানগত কারণে দেশে নারায়ণগঞ্জের গুরুত্ব অনেক।
আরসা প্রধানের নারায়ণগঞ্জে অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, রাজধানীর কাছের জেলা হওয়ায় ঢাকার চেয়ে নারায়ণগঞ্জকেই অনেকে নিরাপদ মনে করেন। তাছাড়া আরসা প্রধানের গন্তব্যস্থল হয়তো অন্য কোথাও ছিল। নারায়ণগঞ্জ ছিল তার যাত্রা বিরতি বিরতি। হয়তো তিনি নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করে কোনো কিছুর বা কোনো সিগন্যালের অপেক্ষা করছিলেন।
তিনি বলেন, এর আগে আসামের উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া ভিন্ন নামে ও পরিচয়ে নারায়ণগঞ্জে বহুদিন বসবাস করে গেছেন। তার সন্তানরা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছেন প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে। তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিষয়টি প্রকাশ পায়।