শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ঈদে ছুটিতে ২ হাজার কোটি টাকা পর্যটন বাণিজ্যের আশা ব্যবসায়ীদের 

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩২

ঈদের লম্বা ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যেতে চান বেসরকারি চাকরিজীবী তানভীর আদর। আগেভাগেই হোটেল বুক করার জন্য পরিচিত একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গত ১৩ মার্চ ঈদের প্রায় ১৭ দিন আগেই বুক করেছেন কক্সবাজারের স্যান্ডি বিচ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের তিনটি কক্ষ। ঈদের পরদিন থেকে পরের তিন দিন পরিবারের সবাই মিলে সেখানে ছুটি কাটাবেন। 

তানভীর আদর ইত্তেফাককে বলেন, ঈদ যতই এগিয়ে আসে হোটেল-মোটেলে রুম পাওয়া তত কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া ভাড়াও বেশি হাঁকেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। তাই ঝঞ্ঝাট এড়াতে আগেভাগেই হোটেল বুকিং দিয়েছেন। প্রতি রাতে ৭ হাজার টাকা হিসেবে তিন দিনের জন্য তিনটি কক্ষ আগাম বুকিং নিয়েছেন। ঈদের দিনে নিজেদের প্রস্তুতি শেষ করেই পরদিন কক্সবাজারে যাত্রা করবেন। 

আরেক পর্যটক খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা হালিমা খাতুন বলেন, কক্সবাজারে হোটেলের বুকিং দেওয়া তো অনেকটা সোনার হরিণ পাওয়ার মতো অবস্থা। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে বাড়তি টাকায় রমজানের ১৫ তারিখ রুম বুকিং দিয়েছেন। 

জানতে চাইলে স্যান্ডি বিচ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, ঈদের পরেই মূলত হোটেল মোটেলে কক্ষের চাহিদা বেড়ে যায়। কক্ষ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সে কারণে ঈদের পরের দিনগুলোতে ভাড়া অনেকটা বেড়ে যায়। আগে থেকে বুকিং করলে কিছুটা সুবিধা পান পর্যটকরা। 

স্থানীয় সূত্র ও ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, দেশীয় পর্যটনের সবচেয়ে জনপ্রিয় কেন্দ্র কক্সবাজারের হোটেলগুলোর এক-তৃতীয়াংশ কক্ষ ইতিমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বুকিং হয়েছে এসিযুক্ত কক্ষগুলো। গরমের কথা মাথায় রেখেই ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর পর্যটকরাই এসব কক্ষ আগাম বুকিং নিচ্ছেন। তবে মধ্য আয় ও অপেক্ষাকৃত কম আয়ের পর্যটকদের জন্যও অনেকটা সাশ্রয়ী মূল্যের ভালো কক্ষ রয়েছে হোটেলগুলোতে। বেশি চাহিদার কক্ষগুলো বুকিং হওয়ার পর এসব কক্ষের চাহিদা বেড়ে যায়। 

কক্সবাজারের পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এবার ঈদে দীর্ঘ ছুটির কারণে সৈকতে পর্যটকের ঢল নামবে। রমজানের অর্ধেক যেতে না যেতেই বুকিং শুরু হয়েছে। চার লক্ষাধিক পর্যটক সক্ষমতার হোটেল মোটেলে ইতিমধ্যে ৩০ শতাংশ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। ঈদের আগেই সব বুকিং শেষ হবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা আরো আশা করছেন আগের বছরের চেয়ে এবার ঈদে পর্যটন বাণিজ্য ভালো হবে। 

পর্যটন খাতের সূত্রমতে, প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি পর্যটক দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণ করে থাকেন। এর সঙ্গে যুক্ত হন ৫ লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪০ লাখের বেশি মানুষের। প্রতি বছর এ খাত থেকে আসে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। সারা বছরের চেয়ে দুই ঈদ ঘিরে পর্যটন ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি আয় করে থাকেন। দুই মৌসুম ঘিরে অস্থায়ীভাবে কর্মসংস্থান হয় কয়েক হাজার মানুষের। 

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, এবার দীর্ঘ ছুটির কারণে পর্যটন বাণিজ্যে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। দেশের জনপ্রিয় পর্যটনস্পটের তথ্য, সড়ক, রেল ও আকাশপথের যাত্রীদের চিত্র, ট্যুর অপারেটরদের তথ্যের ভিত্তিতে এবার পর্যটন খাতে বাণিজ্য ২ হাজার কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

জানতে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ ইত্তেফাককে বলেন, ঈদুল ফিতর ঘিরে গেল দুই বছরে পর্যটন বাণিজ্যে দেড় হাজার কোটি টাকার টার্গেট ধরা হয়েছিল। এবার পর্যটন বাণিজ্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়বে। সে হিসেবে এবার ২ হাজার কোটি টাকার বেশি টার্গেট ধরা হয়েছে। 

আটাব এর উপমহাসচিব মোহাম্মদ তোয়াহা চৌধুরী বলেন, টানা ছুটির কারণে অনেক হোটেল-মোটেল ইতিমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। আমি মনে করি এবারের পর্যটন খাতে বিশাল বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। 

কক্সবাজার হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান ইত্তেফাককে বলেন, গেল বছরের চেয়ে এবার পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছি। আর তাতে ব্যবসাটাও ভালো হবে। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়মা শাহীন সুলতানা ইত্তেফাককে বলেন, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি দীর্ঘ ১১ দিনের ছুটির ইতিবাচক সুযোগটা যাতে নিতে পারি। ইতিমধ্যে আমাদের প্রচার-প্রচারণা ইউনিট নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনো সমস্যা থাকবে না। পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট পুলিশ আছে।

ইত্তেফাক/টিএইচ