মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ইসরায়েলের সঙ্গে ফের যুদ্ধের ঘোষণা লেবাননের 

৫ লাখ গাজাবাসীকে আশ্রয় দেওয়ার দাবি অস্বীকার মিশরের 

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫০

ইসরায়েলের সঙ্গে পুনরায় যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম। এদিকে ৫ লাখ গাজাবাসীকে আশ্রয় দেওয়ার দাবি অস্বীকার করেছে মিশর। 

যুদ্ধবিরতির পর নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়া সম্পর্কে সতর্ক করে এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বলেন, যুদ্ধ এবং শান্তির বিষয়ে লেবানন যে সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখানোর জন্য সব নিরাপত্তা ও সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, হামলার ফলে একটি নতুন যুদ্ধের দিকে ধাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা লেবানন এবং লেবাননের জনগণের জন্য দুর্দশা ডেকে আনতে পারে। সম্প্রতি লেবানন থেকে ইসরায়েলে দফায় দফায় রকেট হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, তারা লেবানন থেকে উত্তর ইসরায়েলের সীমান্তে নিক্ষেপ করা তিনটি রকেট প্রতিহত করেছে। ইসরায়েলের আর্মি রেডিও এক খবরে জানিয়েছে, লেবানন থেকে নিক্ষেপ করা কমপক্ষে পাঁচটি রকেট শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি রকেট প্রতিহত করা হয় এবং দুটি লেবাননের ভূখণ্ডের ভেতরে পড়েছে বলে জানানো হয়। অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দক্ষিণ লেবাননের ইয়াহমোর শহরের উপকণ্ঠে গোলাবর্ষণ করেছে। তবে এসব সংঘাতে এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ সংগঠনও এখন পর্যন্ত ঐ হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। 

এছাড়া ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে তারা ইয়েমেন থেকে আসা একটি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করে। ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আঘাত হানার আগেই ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূপাতিত করা সম্ভব হয় বলে জানানো হয়েছে। ঐ হামলার দায় স্বীকার করেছে হুতি বিদ্রোহীরা। শনিবার ভোরে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে হুতি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি জানান, ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীটি তেল আবিবের কাছে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর লক্ষ্য করে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তিনি জানিয়েছেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো হামলা চালানো হলো। সারি আরো বলেন, হুতিরা লোহিতসাগরে মার্কিন বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যানের ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে। 

এদিকে ফিলিস্তেনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ৫ লাখ ফিলিস্তিনিকে অস্থায়ী ভিত্তিতে সিনাইয়ে আশ্রয় দিতে রাজি আছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল সিসি। লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল-আকবারের বরাতে শুক্রবার এ তথ্য জানায় ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গাজার পুনর্গঠন কাজ চলার সময় গাজার এসব মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হবে। তবে এই দাবি অস্বীকার করেছে মিশর। দেশটির স্টেট ইনফরমেশন সার্ভিস (এসআইএস) জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত খবর মিথ্যা ও ভুয়া। গাজাবাসীকে তাদের নিজ ভূমি থেকে অন্যত্র সরানোর প্রস্তাবকেও মিসর প্রত্যাখ্যান করে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। তারা বলেছে, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার যে কোনো প্রচেষ্টাকে মিসর চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যান করে। 

এ ব্যাপারে মিশরের অবস্থান দৃঢ়। আল-আকবরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতার ও সৌদি আরবে আরব নেতাদের মধ্যে বিগত সপ্তাহগুলোতে যেসব বৈঠক হয়েছে সেখানে তাদের এ ব্যাপারে জানিয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট। এমন প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরই এটি প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটি। তারা ইঙ্গিত দিয়েছে, গাজা পুনর্গঠনের কাজ চলবে গাজাবাসীকে সেখানে রেখেই। দখলদার ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে গাজাবাসীকে স্থায়ীভাবে মিসর, জর্ডান অথবা আফ্রিকার দেশগুলোতে স্থানান্তর করতে চায়। 

তবে আরব বিশ্ব এটি প্রত্যাখ্যান করেছে। মিশরই এখন গাজা সম্ভাব্য পুনর্গঠনের কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত মাসে আরব নেতারা একটি সম্মেলন করেন। সেখানে গাজাকে তিন ধাপে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করা হয়। যেটি বাস্তবায়ন করতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ পড়বে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজায় প্রায় ৫ লাখ বাড়ি তৈরি করা হবে। এছাড়া সেখানে একটি বিমানবন্দরও বানানা হবে। মিসর এ জন্য দাতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।

 

সূত্র: আলজাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল

ইত্তেফাক/টিএইচ