কুমিল্লার মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ বাস স্টেশন এলাকায় শ্রমিক দলের এক নেতাকে গ্রেপ্তার এবং পরিবহন শ্রমিকসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানির অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ বাস স্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলার রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৬ মার্চ) সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জ বাস স্টেশন থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করে কুমিল্লার জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ শাখা।
ঈদ মৌসুমে হঠাৎ বাস বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। সকালের রাস্তায় বের হয়ে গন্তব্যের বাস না পেয়ে আটোরিকশা-ভ্যানে রওনা দিতে হয়েছে তাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী তিশা ও গোমতী, চট্টগ্রামগামী প্রান্তিক, হানিফ, বিআরটিসি, কুমিল্লা ও বি-বাড়িয়াগামী বাস রয়েল সুপার, ফারজানা, সুগন্ধা, ফারহানা ট্রান্সপোর্টের কাউন্টারসহ সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
পরিবহন শ্রমিক আল-আমিন বলেন, আমরা শ্রমিক মানুষ, আমরা পরিশ্রম করে সংসার চালাই। আমাদের আটক শ্রমিকদের মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানি মূলক মামলা প্রত্যাহার করে আমাদের শ্রমিকদের কাজে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাব।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে বাস চলাচল বন্ধের খবর পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে কুমিল্লার মুরাদনগরে চাঁদাবাজির অভিযোগে আবুল কালাম নামের শ্রমিক দলের এক নেতাকে আটকের পর তাকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদল নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলার অভিযোগ ওঠে।
আবুল কালাম উপজেলার নবীপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহবায়ক।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ) ও বিএনপির নেতাকর্মীরা মুরাদনগর থানার সামনে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয়।পুলিশের ওপর হামলা-চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ এবং বৈছাআ এর পক্ষ থেকে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এসমব মামলায় আবুল কালামসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহবায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী দাবি করেন, সোমবার ইফতারের আগে তিনিসহ তিন জন একটি অটোরিকশায় আকবপুর গ্রামে যাচ্ছিলেন। অটোরিকশা চালক মুরাদনগর হয়ে সরাসরি নবীনগর রাস্তায় না গিয়ে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ জানতে চাইলে চালক বলেন, ওই দিক দিয়ে গেলে ৫০ টাকা জিপি (চাঁদা) দিতে হবে। তখন তিনি চালককে সোজা পথে যেতে বলেন। কিন্তু নবীনগর সড়কের মুখেই চালককে চাঁদা দেওয়ার টোকেন আছে কি না জিজ্ঞেস করা হয়। চালক টোকেন নেই জানালে কয়েকজন তাকে মারধর শুরু করেন। যাত্রীরা নেমে মারধরের কারণ ও চাঁদা কে তুলতে বলেছে জানতে চাইলে তারা হামলা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আবুল কালামকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
থানায় হামলাসহ চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবদল নেতা মাসুদ রানা। তিনি বলেন, আবুল কালামের অটোরিকশা স্ট্যান্ডের একটি সিএনজির সঙ্গে উবায়দুলকে বহনকারী সিএনজির ধাক্কা লাগে। এসময় উবায়দুল নেমে অটোরিকশার চালককে থাপ্পড় দেন। তখন ঝামেলা হলে আবুল কালাম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তারা একটু দূরে গিয়ে পুলিশের খবর দিয়ে আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করায়। পরে আমাদের কিছু লোক থানায় গিয়ে ওসি সাহেবের কাছে জানতে চায় আবুল কালামকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো। এ সময় ওসি রুমের ভেতরে আমাদের লোকদের জিম্মি করে পেটাতে থাকেন। এখন উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।