শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

প্রাণ ফিরেছে ঈশ্বরদীর বেনারসি পল্লীতে

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৩

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় শাড়ি আমদানি কমে যাওয়ায় ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহী বেনারসি তাঁতশিল্প নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ভারতীয় শাড়ির দৌরাত্মেও পাশাপাশি রং ও সুতার লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে মুখ থুবড়ে পড়া এ শিল্প এভাবে নতুন সম্ভাবনার আলো দেখছে। 

ম্রিয়মাণ হয়ে যাওয়া ঈশ্বরদীর বেনারসি শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা করছে।  ভারতীয় সীমান্ত পথে সম্প্রতি চোরাচালান কমে যাওয়ায় তাঁতিদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।

ঈশ্বরদীর বেনারসি শিল্পের নতুন সম্ভাবনা তাঁতিদের সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন দেখাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে যে শিল্প  বিলুপ্তর প্রায়, সেটি ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিলে ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহী বেনারসি তাঁতশিল্প আবারও তার স্বর্ণযুগে ফিরে যেতে পারবে বলে স্থানীয়দেরও ধারণা।

সম্প্রতি ফতেমোহাম্মদপুরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লী ও আশেপাশের কারখানা ঘুরে দেখা যায়, তাঁতিরা ফের কর্মচঞ্চল হয়েছেন। জানা যায়, ১৯৬৫ সালের আগে থেকেই ঈশ্বরদীর ফতেমোহাম্মদপুরে কাতান-বেনারসি শাড়ি তৈরির প্রচলন ছিল, যার মূল কারিগর ছিলেন এখানকার অবাংগালি (বিহারি) তাঁতিরা। স্বাধীনতার পর পর্যায়ক্রমে ঈশ্বরদীতে বেনারসি তাঁত কারখানার সংখ্যা বাড়তে থাকে। ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে এখানকার শাড়ির ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

সময়ের পরিক্রমায় চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতীয় শাড়ির আমদানি সহজলভ্য হওয়ায় ঈশ্বরদীর বেনারসি শিল্প মারাত্মক তির সম্মুখীন হয়। বন্ধ হয়ে যায় অনেক কারখানা। অনেকেই বাধ্য হয়ে পেশা বদল করেন। ফতেমোহাম্মদপুরের ৫০০ তাঁতের অধিকাংশই এখন বন্ধ হয়েছে। কেউ কেউ কোনোভাবে টিকে রয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত দুই সহস্রাধিক শ্রমিক কর্মসংস্থান হারিয়েছেন।

 চোরাইপথে শাড়ি আমদানি হ্র্রাস পাওয়ায় দেশীয় উৎপাদিত শাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কাতান-বেনারসি ও কারচুপির কারুকাজের শাড়ির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে। শ্রমিকদের মতে, প্রতিটি শাড়ি তৈরি করতে ৩-৪ দিন সময় লাগে। একজন শ্রমিক সপ্তাহে দুটি শাড়ি তৈরি করতে পারেন। এতে তাঁর আয় হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।

তাঁত শ্রমিকেরা জানান, ঈদকে সামনে রেখে তাঁতিরা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন। চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতীয় শাড়ির আমদানি সম্প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় তাঁতিদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তাঁতি আল-আমিন জানান, ভারতীয় শাড়ি অনুপ্রবেশের কারণে আমাদের শাড়ি বিক্রি হতো না। তবে ৫ আগস্টের পর সীমান্তে চোরাচালান কমেছে। ফলে এবার ঈদের বাজারে দেশীয় বেনারসির চাহিদা বেড়েছে।

আরেক তাঁতি রওশন আলী জানান, এখানকার বেনারসি শাড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় আমরা কঠিন সময় পার করেছি। ভারতীয় শাড়ির প্রবেশ বন্ধ হওয়ায় এখন ঈশ্বরদীর ফুলকলি, আনারকলি, নেট কাতান ও পিওর কাতান শাড়ির বাজার ফের চাঙা হতে শুরু করেছে। এই শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

বেনারসি পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ জামান বলেন, তাঁতশিল্পের অবস্থা বেশ নাজুক। অনেক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে তাঁতিরা নতুন করে কাজে ফিরছেন। বেনারসি পল্লীর ছয়টি কারখানার মধ্যে চারটি চালু রয়েছে, যা ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ইত্তেফাক/এএইচপি