শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতই প্রস্তুতি নিয়ে ডাকাতিতে নামে দলটি: পুলিশ

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৭:১৬

রাজধানীর ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কে একটি ছয়তলা বাড়িতে র‍্যাব-ম্যাজিস্ট্রেট-ছাত্র পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যে কোনো অভিযানে নামার আগে যে ধরনের প্রস্তুতি নেন, ঠিক সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে ডাকাতির অভিযানে নামে দলটি। 

বুধবার (২৬ মার্চ) ভোরের এই ঘটনার সময় স্থানীয়দের সহায়তার ওই দলের চারজনকে ও রাতে আরও দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর এসব কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের-ডিএমপি রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম।

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা র‍্যাবের নাম লেখা টুপি, জ্যাকেট ও ছেনি। ছবি: সংগৃহীত  

এ ঘটনায় গ্রেপ্তাররা হলেন- ফরহাদ বীন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩), ওয়াকিল মাহমুদ (২৬), আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমন (২৯)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ‘র‍্যাব’ লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র‍্যাব লেখা ক্যাপ, একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি লোহার তৈরি ছেনি, একটি পুরাতন লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ ও নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০ থেকে ২৫ জনের এই ডাকাত চক্রটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী সেজে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঢুকেছিলেন ডাকাতি করতে। অপারেশন পরিচালনার জন্য পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে ধরণের প্রিপারেশন নিয়ে যায়, সে ধরণের ফুল প্রিপারেশন তাদের ছিল। তাদের সঙ্গে র‍্যাবের জ্যাকেট পরা অবস্থায় লোকজন ছিল। তারা মাইক্রোফোন হাতে মিডিয়ার লোক সেজে ছিল আর এই চক্রের যারা সোর্স হিসেবে কাজ করে, তাদের মধ্যে ৫ থেকে ৬ ছাত্র সেজে গিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, বুধবার ভোরে ২০-২৫ জন ডাকাতের একটি দল ধানমন্ডির আট নম্বর রোডে গয়নার দোকানের মালিক এম এ হান্নান আজাদের বাসায় ঢোকে। তাদের কয়েকজনের গায়ে ‘র‍্যাব’ লেখা জ্যাকেট ছিল। অন্যরা নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট এবং ছাত্র পরিচয় দেয়।

তিনি জানান, বাড়িটির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এ ছাড়া ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে। ডাকাত দলটি তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারে ওই বাসার গেইটে নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে গিয়ে বলে, তারা র‍্যাবের লোক, তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে বলে তাড়াতাড়ি গেইট খুলতে বলে। সে সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। তখন অভিযুক্ত ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগালি করতে থাকে এবং গেইট না খুললে তাদের হত্যার হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গেইটের উপর দিয়ে উঠে জোর করে গেইট খুলে ফেলে। এরপর তারা সবাই জোর করে বাড়িতে ঢুকে সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

মাসুদ আলম বলেন, খবর পেয়ে ধানমন্ডি থানার একটি টহল দল ওই বাড়িতে যান। এম এ হান্নানকে পুলিশ উদ্ধার করে। এ সময় ডাকাতরা ছেনি ও রেঞ্জ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। তখন আশপাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ডাকাত দলের সদস্য ফরহাদ বীন মোশারফ , ইয়াছিন হাসান, মোবাশ্বের আহাম্মেদ ও ওয়াকিল মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে হাজারীবাগ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির ঘটনায় আবদুল্লাহ ও সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ও পালিয়ে যাওয়া আটজন ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। 

ইত্তেফাক/এসএএস