১৮৯৮ সালের আজকের দিন থেকে তিনি পড়াশোনা ত্যাগ করে বায়োস্কোপ অনুশীলন শুরু করেন। এই বছরেই কলকাতার ক্ল্যাসিক থিয়েটারে চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু করেন এবং ভোলায় এসডিওর ডাকবাংলোয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন। ছোট ভাই মতিলাল সেনকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘দ্য রয়াল বায়োস্কোপ কোম্পানি’।
১৯০০ সালে বিদেশ থেকে আধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানি করেন এবং কোম্পানিকে বিশ্বমানের পর্যায়ে উন্নীত করার প্রয়াস পান। পরে তিনি মুভি ক্যামেরা চালানোর আধুনিক কলাকৌশল রপ্ত করেন এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্যপূর্ণ গতিশীল দৃশ্যের চিত্রগ্রহণ শুরু করেন। ১৯০০ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত তার নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার সংখ্যা ৪০।
বাংলার কিংবদন্তি চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হীরালাল সেনের জন্ম ১৮৬৬ সালে মানিকগঞ্জের বগজুরী গ্রামে। তার বাবার নাম চন্দ্রমোহন সেন ও মা বিধুমুখী। তার পিতামহ গোকুলকৃষ্ণ মুনশি ছিলেন ঢাকার জজ আদালতের আইনজীবী। মানিকগঞ্জ মাইনর স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৮৭৯ সালে তিনি ঢাকার কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। পরে বাবার সঙ্গে কলকাতায় গিয়ে কলেজে ভর্তি হন।
১৮৯৬ সালে কলকাতায় আইএসসি পড়ার সময় স্টার থিয়েটার আয়োজিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী দেখে চলচ্চিত্রের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এর দুই বছর পর গিয়ে তিনি তার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তগুলো নেন। তিনি ১৯০৪ সালে উপমহাদেশের প্রথম নির্বাক সিনেমা ‘আলীবাবা ও চল্লিশ চোর’ নির্মাণ করেন। ১৯০৩ সালে তার রয়াল বায়োস্কোপ কোম্পানি থেকে প্রথম বাংলায় সি কে সেনের মাথার তেল ‘জবাকুসুম’,
বটফেস্ট পালের ‘এডওয়ার্ড টনিক’ ও ডব্লিউ মেজর কোম্পানির ‘সালসা পিলা’ ইত্যাদি বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মিত হয়। এছাড়া তিনি প্রামাণ্যচিত্র ও সংবাদচিত্রও নির্মাণ করেন।
ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন বলে গণ্য করা হয় তাকে। এছাড়া ভারতের সর্বপ্রথম বিজ্ঞাপনবিষয়ক চলচ্চিত্রের নির্মাতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় তাকে। ১৯১৭ সালে এক অগ্নিকাণ্ডে তার তৈরি সকল চলচ্চিত্র নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তার চেষ্টা এবং পরিচিতি শুধু বাড়তেই থাকে। বর্তমানে তার নামে পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাকে নিয়ে লেখা হয়েছে একাধিক বই। ১৯১৭ সালে এই গুণী পরিচালক মৃত্যুবরণ করেন।