চীনের অত্যাধুক ফাইটার জেটের একটি ভিডিও ফুটেজ নতুন করে সামরিক মহলে আলোড়ন তুলেছে। ভিডিওতে লেজবিহীন তিন ইঞ্জিনের একটি ফাইটার জেটকে সিচুয়ান প্রদেশের চেংডু এয়ারক্রাফ্ট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের রানওয়ের কাছে মহাসড়কের ওপর দিয়ে উড়তে দেখা যায়। পশ্চিমা বিশ্লেষকরা এটিকে জে-৩৬ (J-36) নামে অভিহিত করেছেন।
এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, ভিডিও থেকে তোলা ছবিগুলো কখন তোলা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়, তবে গত সোমবার চীনা সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে এটি ছড়িয়ে পড়ে।
গত বছরের শেষের দিকে চীনা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিমানে ছবি প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি দ্রুত বিমান উৎসাহী এবং সামরিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর নতুন করে কিছু ফুটেজ এসেছে, যেগুলো দেখে এটিকে ষষ্ঠ প্রজন্মের বলে মনে করা হচ্ছে। জেটটিতে সর্বশেষ স্টিলথ প্রযুক্তি, এভিওনিক্স ও পাওয়ারপ্ল্যান্ট এবং এয়ারফ্রেম প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ইতালীয় সামরিক বিমান চালনা বিশেষজ্ঞ ডেভিড সেনসিওত্তি নিজের ওয়েবসাইটে বলেছেন, ছয় সেকেন্ডের এই ভিডিওটি J-36-এর নকশা সম্পর্কে একটি ঘনিষ্ঠ ধারণা প্রদান করে। ট্রাইজেট ইঞ্জিনের বিন্যাস - ডানার নিচে দুটি ইঞ্জিন ইনটেক এবং ককপিটের পেছনে একটি ডোরসালি-মাউন্টেড ইনটেকসহ এটি প্রচলিত টুইন-ইঞ্জিন সেটআপ থেকে ভিন্ন। এই কনফিগারেশন 'থ্রাস্ট' এবং 'রিডানডেন্সির' দিক থেকে সুবিধা প্রদান করতে পারে।
তিনি বলেন, ফাইটার জেটিটির পেটের জায়গায় অভ্যন্তরীণ অস্ত্রের জন্য জায়গা রয়েছে, যা এটিকে দূরপাল্লার স্ট্রাইক মিসাইল বহন করতে সক্ষম করতে পারে।
ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির দৌড়ে 'J-36' চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের থেকেও এগিয়ে রাখতে পারে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর পঞ্চম প্রজন্মের জেট - টুইন-ইঞ্জিন F-22 এবং একক-ইঞ্জিন F-35 - এই মুহূর্তে বেশ প্রচলিত। যদিও চীনের কাছেও দুটি মডেলের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রয়েছে, J-20 এবং J-35।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে বলেন, মার্কিন বিমান বাহিনীর ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান 'F-47'-এর জন্য একটি চুক্তি বোয়িংকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলো কবে তৈরি করা হবে বা মোতায়েন করা হবে, তার কোনো সময়সীমা দেওয়া হয়নি।
বলা হয়েছে, ওই চুক্তিতে কেবল 'প্রকৌশল ও উৎপাদন উন্নয়ন পর্যায়' এবং 'মূল্যায়ন করার জন্য অল্প সংখ্যক পরীক্ষামূলক বিমানের' জন্য তহবিল দেওয়া হবে।
আর এদিকে, চীনের 'J-36' এই সপ্তাহে সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার জন্য আলোচনায় প্রাধান্য বিস্তার করছে। এছাড়াও এটিই যে চীনের কাছে একমাত্র ষষ্ঠ প্রজন্মের জেট, তা নয়। তাদের কাছে ষষ্ঠ প্রজন্মের আরও যুদ্ধবিমান থাকতে পারে।
ডিসেম্বরে যেদিন J-36-এর ছবি উঠে আসে, সেদিনই একটি নতুন লেজবিহীন, জোড়া ইঞ্জিনের জেটের ছবিও পোস্ট করা হয়। এটিকে কেউ কেউ 'J-XX' এবং কোনো কোনো বিশ্লেষক 'J-50' নামেও অভিহিত করেন। তবে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) জনসমক্ষে জে-৩৬ বা জে-৫০-এর অস্তিত্ব স্বীকার করেনি।
গত মাসে রাষ্ট্র পরিচালিত ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস বিভিন্ন চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, দুটি নতুন বিমানের ছবি যদি আসল হয়, তাহলে চীন ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরিতে দ্রুত অগ্রগতি করছে।
অ্যারোস্পেস নলেজ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ইয়া'নানকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে, চীন পরবর্তী প্রজন্মের বিমান সরঞ্জাম অনুসন্ধানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মনে হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, গত নভেম্বরে জুহাইতে অনুষ্ঠিত চীনের এয়ারশোতে চীনের জে-৩৫ প্রথম জনসাধারণের কাছে প্রদর্শিত হয়েছিল। এটি ১০ বা তারও বেশি বছর ধরে তৈরি হচ্ছিল।