ঢাকায় অনুষ্ঠিত চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলনে সরকার পরিবর্তন হলেও নীতির ধারাবাহিকতা থাকবে কি না, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন উদ্যোক্তারা। এবারে সম্মেলনে নতুন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এসেছে, নতুন কিছু চুক্তিও হয়েছে। সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগের মিশন-ভিশন ও কালচারাল বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলন পূর্ণাঙ্গভাবে সফল করতে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। বিনিয়োগ সম্মেলনে সেসব কোম্পানি ও ব্যক্তি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তাদের নিয়ে বিনিয়োগের একটি ‘পাইপলাইন’ তৈরি করা হবে। নিয়মিত ফলোআপের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব ও বেজার মহাপরিচালক দয়ানন্দ দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন। নাহিয়ান রহমান রচি বলেন, এ রোডম্যাপ ১৮ থেকে ২৪ মাসের। বিনিয়োগ সামিটে সেসব কোম্পানি ও ব্যক্তি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তাদের নিয়ে বিনিয়োগের একটি পাইপলাইন তৈরি করা হবে। পরবর্তী সময়ে সেই পাইপলাইনের তালিকা ধরে ফলোআপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তখন আমরা তাদের কাছে জানতে চাইব, আপনারা বিনিয়োগ আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, এখন কি অবস্থা? কোন সমস্যা আছে কি না? বিনিয়োগের চূড়ান্ত রূপ দিতে আর কী কী সহায়তা লাগবে? সংবাদ সম্মেলনে রচি জানান, এবারের সম্মেলনে আমরা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগের মিশন-ভিশন ও কালচারাল বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
বৃহস্পতিবার সারা দিন আমাদের এফডিআই হিটম্যাপ অনুযায়ী চারটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে ডিজিটাল ইকোনমি, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস, হেলথ কেয়ার অ্যান্ড ফার্মা, এগ্রিকালচার ও এগ্রি প্রসেসিং, গ্রিন হাউজ ইম্পেক্ট, এগ্রিকালচার ইন্ডাস্ট্রিতে ফাইন্যান্সিং ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বেশ আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এছাড়া কিছু ব্রেকআউট সেশন ছিল। এসব সেশনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে কী কী সম্ভাবনা আছে সেগুলো জানানোর পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ম্যাচমেকিং তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো বিনিয়োগকারীদের ট্যাগ করে একটি বিনিয়োগ পাইপলাইন তৈরি করা। তিনি জানান, এবারের বিনিয়োগ সামিটে ৪৫০ জন বিদেশি বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করেছেন। এখন পর্যন্ত হ্যাঙ্গার গ্রুপ ১৫০ মিলিয়ন, শপঅ্যাপ ১১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের চুক্তি করেছে। এছাড়া আরো অনেকেই বিনিয়োগের কমিটমেন্ট করেছে।
আগে বিনিয়োগকারীরা যেসব সমস্যার কথা বলত, এখন তারা সংখ্যাটা কমিয়ে এনেছে। আমরাও বলি প্রতিবন্ধকতা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ইতিমধ্যে আপনারা দেখেছেন, কোরিয়ান ইপিজেডে সমস্যাটি কীভাবে সমাধান হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব জানান, এবারের বিনিয়োগ সামিট অন্যবারের চেয়ে আলাদা। আগে শুধু সভা-সেমিনারের মধ্যেই সীমাবদ্ধা ছিল। কিন্তু এবারের সামিটে সভা-সেমিনারের পাশাপাশি বিটুবি, বিটুজি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ রাখা হয়েছিল। বিনিয়োগকারীরা এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ সম্ভাবনা, সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তারা তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে চেয়েছে। বর্তমান সরকার চলে গেলে তারা এসব নীতি-পলিসি অব্যাহত রাখবেন কি না।