শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

হেফাজতে ইসলামের নেতার বাড়িতে হামলার অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৯

নেত্রকোনা সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নের  একটি মাদ্রাসা সুপারকে মারধর করার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে হেফাজতে ইসলামের এক নেতার বক্তব্য দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার বাড়ি ঘরে হামলা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে।

বুধবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নের ছোট গরদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ওই নেতার নাম আবুল কালাম আজাদ রেনু মিয়া। তিনি মৌগাতি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও ছোট গরদী গ্রামের বাসিন্দা। পাশাপাশি আমলী মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী।

ভুক্তভোগী নাম আনিসুর রহমান। তিনি আবুল কালামের প্রতিবেশী ও একই ইউনিয়নের হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বড় গরদী বাগানবাড়ী মসজিদের ইমাম।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে ওই মাদ্রাসার সুপার আবদুল খালেক খানের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। আবুল কালাম প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে চাইছিলেন। কিন্তু তিনি না হতে পারায় সম্প্রতি এই বিরোধ চরম পর্যায়ের রূপ নেয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে আবুল কালাম তার লোকজন নিয়ে মাদ্রাসায় সুপারের কক্ষে যান। পরে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আবুল কালাম সুপারকে টেনে হিঁছড়ে কক্ষ থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সুপার আবদুল খালেকের অভিযোগ, আবুল কালাম মাদ্রাসার সভাপতি হওয়ার জন্য অব্যাহতভাবে তাকে চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি তাকে জানিয়ে দেন এ ব্যাপারে তার কোন হাত নেই। এরপর আবুল কালাম সুপারের কাছে অনৈতিকভাবে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু তিনি এতে রাজি না হওয়ায় আবুল কালাম মাদ্রাসায় এসে তাঁকে মারধর করে কক্ষ থেকে বের করে দেন। তিনি বলেন, এ নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মডেল থানার ওসি এবং নেত্রকোনা অস্থায়ী সেনাক্যাম্পে অভিযোগ দিয়েছি।'

ওই ঘটনার প্রতিবাদে গত বুধবার দুপুরে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র ও হেফাজত ইসলামের নেতা আনিসুর রহমান সেখানে বক্তব্য দেন। এরপর তিনি কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিকদের কাছে আলাদাভাবে বক্তব্য দেন।

আনিসুর ও তার পরিবারের লোকজনের অভিযোগ এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় আবুল কালাম, তার ছেলে লোকজন নিয়ে আনিসুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় আনিসুর রহমানকেও মারপিট করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌগাতি ইউনিয়নের হাটকলা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করছে হেফাজতে ইসলামের জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

মিছিলে অংশ নেয়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেত্রকোনা জেলা সেক্রেটারি ও হেফাজত ইসলামের জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক আসাদুর রহমান বলেন, 'আমাদের দলের নেতা আনিসুর রহমানের বাড়িঘর ভাঙচুরসহ তাকে মারপিট করেছেন বিএনপি নেতা আবুল কালাম ও তার লোকজন। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যিনি মাদ্রাসার সুপার তিনি খুবই সজ্জন মানুষ। তিনি বিএনপি নেতাকে চাঁদা না দেওয়ায় তাকেও মারধর করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। গত আওয়ামী লীগ আমলে আলেমদের উপর পুলিশি হয়রানি হলেও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে আলেমদের বাড়ি ঘরে হামলার ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও দলীয়ভাবে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।'

এদিকে গত বুধবার আবুল কালামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সুপারকে মারধরের অভিযোগে অনুষ্ঠিত হওয়া মানববন্ধনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় হাটখলা বাজারে আবুল কালামের লোকজন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। ওই কর্মসূচিতে আবুল কালাম অংশ নিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'ওই দিন মাদ্রাসার সুপারকে মারধর বা চাঁদা দাবি করা হয়নি। শুধু দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। আর হেফাজতের নেতা আনিসুর রহমানকে মারধর ও তাঁর বাড়িঘরে হামলা আমি বা আমার লোকজন করেনি। আমার ছেলে যখন লোকজন নিয়ে আনিসুর রহমানের বাড়িতে যেতে চেয়েছিল তখন আমি তাকে বাধা দিয়েছি। আনিসুর নিজেই তার ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর ও টিনের বেড়ায় দা দিয়ে কুপিয়েছেন। আমি যেহেতু ইউনিযয়ন বিএনপির সভাপতি আমাকে বিতর্কিত করতে এরকম মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক চিকিৎসক মো. আনোয়ারুল হক জানান, বিষয়টি তদন্ত করতে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বজলুর রহমান পাঠানকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আবুল কালামের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তদন্ত কমিটির সদস্য জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম মনিরুজ্জামান দুদু বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছি।

নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, মাদ্রাসার সুপারকে লাঞ্ছিত ও মানববন্ধনে বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে হামলা মারধরের ঘটনার খবর পেয়ে  পুলিশ  ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ইত্তেফাক/এপি