শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

মাহে রমজান-পরবর্তী করণীয়

আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৫

তাকওয়া ও ইমান বৃদ্ধির মহাবিদ্যালয়, জাহান্নামের থেকে মুক্তির মাস মাহে রমজান অতিবাহিত করেছি। যেহেতু আমরা রমজানের প্রতিষ্ঠান থেকে মুত্তাকির সনদ নিয়ে বের হয়েছি, সেহেতু মূল্যায়ন করা দরকার আমরা আসলে কী কী দীক্ষা ও উপকারিতা গ্রহণ করেছি?

আমরা কি যথাযথ তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছি? প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদে বিজয় লাভ করতে পেরেছি, নাকি অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার, বদভ্যাস ও অনৈসলামি কৃষ্টি-কালচার আমাদের মধ্যে ছেয়ে বসেছে? আমরা কি রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও মুক্তি পাওয়ার মাধ্যমগুলি অনুশীলন করেছি? রমজান থেকে উপদেশ ও উপকার গ্রহণ করতে না পারলে এবং স্বীয় জীবনকে পরিবর্তন করতে না পারলে অন্য সময় কতটা করতে পারব, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেননা পরিবর্তনের জন্য নিজের প্রচেষ্টা থাকতে হয় (সুরা আর রাদ-১১)।

পৃথিবীতে রমজান কেন্দ্রিক তিন ধরনের মানুষের বিচরণ লক্ষ করা যায়। প্রথমত একনিষ্ঠ এবাদতগুজার বান্দা; যারা রমজানের আগেও আল্লাহর অনুগত হয়ে এবাদত বন্দেগি করতেন। রমজানের আগমনে এর ফজিলত ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে তারা আরও তৎপর হন। তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান, তারা যেন রমজানের পরও আল্লাহর আনুগত্য ও অনুসরণে এবং এবাদত-বন্দেগিতে সদা অটল থাকেন।

দ্বিতীয়ত গাফেল বা উদাসীন ইবাদতকারী বান্দা যারা রমজানের আগে এবাদতের ব্যাপারে উদাসীন ছিল। রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান, তারা যেন রমজানের পরও আল্লাহর এবাদত-বন্দেগিতে সদা অটল থাকেন।

তৃতীয়ত এমন পাপাচারী বান্দা, যে রমজান আগমন করল ও বিদায় হয়ে গেল কিন্তু তার কোনো উপলব্ধি ও পরিবর্তন ঘটল না। তাদেরকে আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাই, আল্লাহর কাছে তওবা করতে ও তার আনুগত্যের পথে ফিরে আসতে।

এক নারী উত্তমরূপে চরকায় সুতা কেটে সুন্দর একটি পোশাক তৈরি করল। ফলে সবাই তার প্রশংসা করল ও মুগ্ধ হলো এবং সে নিজেও আনন্দিত হলো। হঠাৎ করে একদিন অকারণেই উক্ত পোশাকটি থেকে একটি একটি করে সুতা খুলে নষ্ট করে ফেলল। ঠিক অনুরূপ ঐ ব্যক্তির অবস্থা যে রমজানোত্তর পুনরায় পাপাচার ও অন্যায়ে ফিরে আসে এবং সৎ আমল পরিত্যাগ করে। এ মর্মে আল্লাহ-তায়ালা বলেন: ‘তোমরা সেই নারীর মতো হয়ো না, যে তার সুতা মজবুত করে পাকাবার পর তার পাক খুলে নষ্ট করে দেয় (সুরা নাহাল: ৯২)।’

রমজানে সৎ আমলের যথাযথ অনুশীলন করা সত্ত্বেও কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা পাপাচারে ফিরে যাওয়ার লক্ষণ, যেমন: ১. ঈদের দিনই জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় না করা বা পূর্ণ পাঁচ ওয়াক্ত আদায় না করা। ২. ঈদের খুশির নামে গান-বাজনা, ছায়াছবি, ডিশ ও ভিডিওতে অবৈধ অনুষ্ঠানমালা দর্শনে মেতে ওঠা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার চর্চা করা। ৩. ঈদ উপলক্ষ্যে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও বিচরণ। এগুলি রমজানের আমল কবুলের আলামত নয়। কেননা প্রকৃত রোজাদার ঈদের দিন আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আদায় করেন। তাই আমরা শুধু মৌসুমভিত্তিক এবাদত করেই বিরত থাকব না, বরং আমরা সব সময়ের জন্য এবাদত জারি রাখব। কেননা আল্লাহ বলেন: ‘তুমি মৃত্যু অবধি তোমার রবের এবাদত করতে থাকো (সুরা হিজর: ৯৯)।’

উল্লেখ্য, রমজানের রোজা শেষ হলেও অবশিষ্ট মাসগুলিতে বহু নফল রোজা ও এবাদত রয়েছে; যেমন: শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা, প্রতি চন্দ্রমাসে তিন দিন রোজা রাখা, প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও সোমবার রোজা রাখা (তিরমিযি-৭৪৭), আরাফা দিনের রোজা, আশুরার রোজা, শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা, কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা, ফরজ সালাত সংশ্লিষ্ট ১২ রাকাত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ আদায়, সালাতের পর ও সকাল-সন্ধ্যায় দোয়া ও জিকির, সারা বছর সাধারণ দান সদকাহ করা, ফজর সালাতের পর কুরআন তিলাওয়াত করা ইত্যাদি।

পরিশেষে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে সহিহ আকিদা ও সৎ আমলের ওপর সুদৃঢ় রাখেন এবং এমতাবস্থায় মৃত্যু দান করেন। আমিন। 

লেখক: গবেষক, প্রভাষক (আরবি), বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা), নীলফামারী সরকারি কলেজ, নীলফামারী

ইত্তেফাক/এসএএস