বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় নির্বাসনের মুখে সেই খলিল

আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:২৯

ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে দেশ থেকে নির্বাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে রায় দিয়েছেন দেশটির এক বিচারক। তবে তাকে এখনি যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগে বাধ্য না করে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত আপিলের সময় দেওয়া হয়েছে।

মাহমুদ খলিল গত ৮ মার্চ থেকে লুইজিয়ানা ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন। এরপর থেকে তার মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। তিনি একজন স্থায়ী বৈধ মার্কিন বাসিন্দা এবং তার বিরুদ্ধে এর আগে কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের অন্যতম পরিচিত মুখ খলিল। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে তিনি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন।

রায় প্রকাশের পর খলিল আদালতে বলেন, এই আদালতই বলেছিল ন্যায্যতা ও যথাযথ প্রক্রিয়ার অধিকারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। আজ আমরা যা দেখলাম, তাতে এই নীতিগুলোর কোনো প্রতিফলন ঘটলো না।

ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৫২ সালের একটি শীতল যুদ্ধের সময়ের অভিবাসন আইন উল্লেখ করে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে খলিলের উপস্থিতি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থের পরিপন্থী। সেই ভিত্তিতেই তাকে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আদালতের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত।

তবে খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, তাকে ইহুদিবিদ্বেষ বা সহিংসতার কোনো প্রমাণ ছাড়াই টার্গেট করা হয়েছে। আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডার হাউট বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের অধিকারের পক্ষে লড়ছি।

আরেক আইনজীবী জনি সিনোডিস বলেন, মাহমুদ যুক্তরাষ্ট্র বা ইহুদি জনগণের বিরুদ্ধে নন। তিনি কিছু ভুল করেননি।

মাহমুদ খলিল নিউ জার্সির একটি ফেডারেল আদালতে তার গ্রেপ্তারকে সংবিধানবিরোধী বলে চ্যালেঞ্জ করে আরেকটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় জিতলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার বহিষ্কারকে ঠেকানো যেতে পারে।    

মাহমুদ খলিল কে?

মাহমুদ খলিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের স্নাতকোত্তর ছাত্র। তিনি ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। গাজায় ইসরায়েলের তাণ্ডব শুরুর পর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র ছিলেন তিনি।

গাজায় ইজরায়েলের নৃশংস হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন এবং ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের ঢেউ ওঠে। তিনি এই আন্দোলনে একটি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্র বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আলোচনায় মাহমুদ খলিল ছিলেন একজন প্রধান আলোচক। ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে হুমকি দিলে বিশ্ববিদ্যালয়টি মোট ৯ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক বহিষ্কারের ঘটনা। সেই সঙ্গে ফেডারেল বাজেট পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া নীতিগুলো বাস্তবায়ন করতেও সম্মত হয়েছে।

ইত্তেফাক/টিএস/এসকে