বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই, ছেলেদের খুঁজছে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশি পরিবারগুলো

আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৫৯

কাজের জন্য মরিয়া বাংলাদেশি তরুণরা অভিযোগ করেছেন, তাদের রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতারিত করা হয়েছে। সম্প্রতি ২২ বছর বয়সী তরুণ ইয়াসিন শেখের মৃত্যুর পর বিষয়টি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, প্রায় এক ডজন পরিবার তাদের ছেলেদের ফিরিয়ে আনার জন্য সেখানে যোগাযোগ করেছে। তারা অভিযোগ করেছে, প্রতারণার মাধ্যমে তাদের রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগদান করানো হয়েছে।

বাংলাদেশ পালিয়ে আসা ২৬ বছর বয়সী তরুণ মোহাম্মদ আকরাম হোসেন বলেন, 'আমরা জানতাম না যে, আমরা যুদ্ধের ময়দানে যাব।'

আকরাম হোসেন দাবি করেছেন, তিনি এবং তার শ্যালক একটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে নিবন্ধিত ছিলেন এবং রাশিয়ায় কাজ দেওয়ার আগে প্রথমে তাদের সাইপ্রাসে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। রিক্রুটিং এজেন্সি বলেছিল শুধুমাত্র রাশিয়ার কাজের ভিসা পাওয়া যাচ্ছে এবং আমরা যেতে রাজি হয়েছি। কিন্তু আমরা কখনো কল্পনাও করিনি যে, আমরা এভাবে পরিত্যক্ত হব।

বাংলাদেশে বেকারত্বের হার অনেক বেশি এবং গত বছর বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটলে অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রুশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনে যুদ্ধ করা ইয়াসিনের চাচা আবুল হাশেম বলেন, গত মার্চের শেষের দিকে ঈদের ছুটির সময় পরিবারকে তার এক বন্ধু ডেকে পাঠায়। সে ছিল ইয়াসিনের বন্ধু, যে রাশিয়ার পক্ষে লড়ছে। সে ঈদের দিন আমাদের ফোন করে জানায়, ইয়াসিন নিহত হয়েছে। পরে আমরা একজন রুশ কমান্ডারের কাছ থেকে একটি কল পাই।

২২ বছর বয়সী তরুণ ইয়াসিন শেখ। ছবি: সংগৃহীত

ইয়াসিন শেখের পরিবার বলছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সে যখন বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়, তখন তারা তাকে সেখানে পাঠানোর অর্থ দিয়েছিলেন। একজন দালাল তাকে রাশিয়ায় একটি চীনা সংস্থায় বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হিসাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু গত ডিসেম্বরে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় সে।

হাশেম বলেন, 'তাকে পাঠাতে আমাদের অনেক খরচ হয়েছে, এখন আমরা তার লাশের জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছি, তার মা যাতে তাকে বিদায় জানাতে পারেন, সে ব্যবস্থা নিতে।'

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়, এএফপি স্বাধীনভাবে পরিবারের দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। তবে মস্কোয় বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফরহাদ হোসেন বলেছেন, হতাহতের বিষয়ে দূতাবাস অবগত আছে।

ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সেনাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং মস্কো বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ের জন্য আরও সেনা খোঁজার চেষ্টা করছে। রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউই জানায়নি, কতজন বিদেশি তাদের সামরিক বাহিনীতে কাজ করছে বা কতজনকে তারা যুদ্ধবন্দী হিসাবে আটক রেখেছে।

ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ থেকে রিক্রুটরা কাজের প্রলোভনে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করেছে বলে জানা গেছে।

চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফরহাদ হোসেনের মতে, রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ বলেছে, মস্কোর পক্ষে যারা লড়াই করছে তারা চুক্তিতে সই করেছে। তারা বেতনভুক্ত ছিল এবং যুদ্ধের নিয়মে পরিচালিত হতেন।

রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে কতজন বাংলাদেশি যোগ দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। যদিও বাংলাদেশের একটি পত্রিকা নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে এই সংখ্যা ১০০ জনেরও বেশি বলে ধারণা দিয়েছে।

ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মানবপাচারের অভিযোগে এক বাংলাদেশি নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মস্কোর সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা মোহাম্মদ আকরাম হোসেন প্রথম বাংলাদেশি পুলিশকে এই পাচারকারী নেটওয়ার্ক সম্পর্কে সতর্ক করেন। তিনি ১০ বাংলাদেশির একটি দলের সঙ্গে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে হজের ভিসায় প্রথম সৌদি আরব গিয়েছিলেন।

তিনি বলছিলেন, সেখানে কয়েক সপ্তাহ থাকার পরে, আমরা রাশিয়ায় উড়ে যাই। তারপর তাকে রাশিয়ান ভাষায় একটি চুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি বুঝতে পারেননি। তবে যাইহোক, সেটিতে সই করেছিলেন।

তিনি বলেন, সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে আমাদের বাসে করে একটি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমরা রাত কাটিয়েছি। পরদিন সকালে তারা আমাদের কয়েকজনকে সামরিক ইউনিফর্ম দেয় এবং প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যায়।

মোহাম্মদ আকরাম হোসেন জানান, যুদ্ধের মাঠে যাওয়ার আগ মুহূর্তে সেনেগাল থেকে একদল লোকের সঙ্গে তিনি পালিয়ে বাড়ি ফিরতে সক্ষম হন। তবে তার শ্যালক সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাশিয়ায় থেকে গেছেন।

ইত্তেফাক/এসকে