বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

নববর্ষ এলেই বাড়ে ব্যস্ততা, বাকি সময় টানাপোড়েনে কাটে শরীয়তপুরের মৃৎশিল্পীদের

আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২১:৫৬

বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। নববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রতি বছরই দেশের নানান জায়গায় মেলার আয়োজন করা হয়। এই বৈশাখী মেলাকে ঘিরে বাড়ে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা। শরীয়তপুরের সদর, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা উপজেলার অন্তত ২০টি কারখানায় নানা পণ্য তৈরি করছেন মৃৎশিল্পীরা। চলছে নানা প্রস্তুতি। বিশেষ করে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা এতটাই বেড়েছে যে দিন-রাত তারা চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনো মাটির পণ্যের চাহিদা ফুরিয়ে যায়নি। যদিও আগের মতো ব্যবসা আর নেই।

মৃৎশিল্পীরা জানান, বৈশাখ উপলক্ষ্যে একসময় মাটির জিনিস তৈরিতে চৈত্রমাস জুড়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন তারা। ব্যবসায়ীরাও ব্যস্ত থাকতেন সেইসব পণ্য বিক্রিতে। এমনিতে সারাবছর মৃৎশিল্পের তেমন চাহিদা না থাকলেও নববর্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা বসে, কেবল এ মেলাতেই চাহিদা থাকে এসব মৃৎশিল্পের। তাই বছরে এই একটা উৎসব ঘিরে তাদের আশা থাকে অনেক। সারাবছর মাটির তৈজসপত্র তৈরি করে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করলেও মেলার জন্য তারা তৈরি করেন বাহারি সব মাটির খেলনা। এবারের বৈশাখ ঘিরে শরীয়তপুরের ২০ জায়গার পালবাড়িতে চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা।

তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাটির সামগ্রী। ছবি: ইত্তেফাক

শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে কার্তিকপুর পালপাড়া গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের মাটির সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন কারিগরেরা। এর মধ্যে রয়েছে মাটির হাঁড়ি-পাতিল, রবিঠাকুর, কাজী নজরুল, গণেশসহ বিভিন্নজনের প্রতিকৃতি। পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁস, মুরগির ডিমও রয়েছে। এ ছাড়া নানা জাতের ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ, পিঠা তৈরির ছাঁচও তৈরি হচ্ছে সমানতালে। পয়লা বৈশাখ থেকে পুরো মাস চলবে এ ব্যবসা।

কারিগর তিলক পাল বলেন, এখন আর মাটির জিনিসের তেমন কদর নেই। সারাবছর টানাপোড়েনে চলতে হয়। পূর্বপুরুষের পেশা তাই ইচ্ছে হলেও ছাড়তে পারি না। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও সামগ্রীর চাহিদা থাকে। তাই এই সময়ে ভালো আয় হয়।

ছবি: ইত্তেফাক

মৃৎশিল্পী রুপক পাল জানান, বাজারে এখন মাটির তৈরি পণ্যের কোনো কদর নেই। প্লাস্টিক পণ্যের ওপর মজেছে মানুষ। ঐতিহ্যের প্রতি মানুষের দৃষ্টি ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

মিন্টু পাল জানান, ঈদ ও বৈশাখী মেলার বিক্রি থেকে যে মুনাফা হয় তা দিয়েই তাদের সংসার চলে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কাঁচামালের দামও বেশি হওয়ায় মুনাফা কমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এ পেশায় টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে উঠেছে তাদের জন্য।

বিষয়টি নিয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিসার প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বংশপরম্পরার এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সরকারিভাবে কিছু মৃৎশিল্পীকে সহায়তা করা হচ্ছে। সহযোগিতার পরিসর ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হবে।

ইত্তেফাক/এসএ/এসএএস