শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

১৫ এপ্রিল থেকে ৫৮ দিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ

আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:২৭

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে প্রথমবারের মতো এ বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকবে বঙ্গোপসাগরের ভারতের জলসীমায়ও। এ ক্ষেত্রে ভারতের নিষেধাজ্ঞো বলবৎ থাকার দুদিন আগে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাবে।

মন্ত্রণালয়ের সামুদ্রিক মত্স্য-২ শাখার উপসচিব এইচ এম খালিদ ইফতেখার রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।

এর ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বঙ্গোপসাগরের কোনো স্থানেই যান্ত্রিক এমনকি ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা দিয়েও মাছ আহরণ করা যাবে না। ফলে উল্লিখিত এলাকায় কোনো ট্রলার কিংবা দাঁড়বাহী নৌকা মাছ ধরতে গেলেই আইনি ঝামেলার মুখোমুখি হতে হবে।

৫৮ দিন গভীর সমুদ্রগামী ফিশিং ভ্যাসেল এর সাথে উপকূলীয় ইলিশ শিকারী ইঞ্জিন চালিত কাঠের ট্রলারে অবরোধ দেয়ায় বেকার হয়ে পরেছে বরগুনা সহ দক্ষিণ অঞ্চলের কয়েক লাখ জেলে। তবে ভারতীয়দের সাথে মিলিয়ে অবরোধ দেয়ায় খুশি উপকূলীয় জেলেরা।

জানা যায়, মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। শুরুতে শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও ২০১৯ সাল থেকে সব ধরনের নৌযানকে এর আওতায় আনা হয়। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে উপকূলের কয়েক লাখ জেলে দুর্বিসহ অবস্থার মুখোমুখি হন। নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করার জন্য বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল এবং দেশের উপকূলীয় এলাকার জেলেরা নৌ অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁদের দাবি তুলে ধরে আসছিলেন। সেই সঙ্গে দেশের মত্স্যবিজ্ঞানীদেরও বিষয়টি নিয়ে গবেষণার তাগিদ ছিল। কিন্তু এত দিন বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। এবছরেই জেলেদের দাবি অনুযায়ী ভারতীয়দের সাথে নিষেধাজ্ঞা শুরু হতে যাচ্ছে।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিলের দুই মাসের অভয়ারণ্যের নিষেধাজ্ঞা এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, সব মিলিয়ে বছরে ১৪৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হয় তাঁদের। এখন তা আট দিন কমে গেল।

বরগুনা জেলা মত্স্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সামপ্রতি মত্স্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এর সাথে আমরা বৈঠক করেছি। তখন আমরা তাকে বিষয়টি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা শুরু থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার তত্কালীন প্রধানমন্¿ীর কাছে দাবি করে আসছিলাম। কারণ, এতে সাগর-নদী মাছশূন্য হয়ে পড়েছিল। জেলেরা খুব কষ্টে আছেন। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও ধ্বংস হওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছিল। দীর্ঘদিন পর হলেও এই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা খুব খুশি।

মোস্তফা চৌধুরী আরও বলেন, এর আগে বাংলাদেশের জলসীমায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রায় ৩৯ দিন ভারতীয় জেলেরা  বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যেত। এখন সেই সুযোগ আর থাকবে না।

জেলে নেতারা বলেন, গত আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ফলে সুযোগ দেওয়া হয়েছে ভারতীয় জেলেদের। পাঁচ মাস ইলিশ মৌসুমের তিন মাস নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশীয় জেলেদের ইলিশ শিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো।

তারা আরও বলেন, ২০১৯ সাল থেকে এই অধ্যাদেশের আলোকে বাংলাদেশের জেলেদের জুলুম অত্যাচার করা হচ্ছে। ভারতীয়রা বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে সকল ধরনের মাছ শিকার করে নিয়ে গিয়ে যেতো। এছাড়াও বাংলাদেশী জেলেদের নির্যাতন সহ মাছ লুট করে নিয়ে যায়। এই সময় বাংলাদেশের জেলেরা আর্থিক সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়তো।

জানা গেছে, জেলা মত্স্য অফিসের তৈরি করা তালিকায় বরগুনায় নিবন্ধিত জেলে অর্ধ লক্ষাধিক। এর পাথরঘাটা হচ্ছে ১৬ হাজার ৮১১ জেলে। এছাড়াও আরো কয়েক হাজার অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে উপকূলীয় এ এলাকায়।

বরগুনা জেলা মত্স্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুম জানান, ইতিমধ্যে সাগর থেকে জেলেরা ফিরতে শুরু করেছে। এবারের অবরোধ সফল করতে সকল জেলেরা সরকারকে সহযোগিতা করবেন।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খান জানান, ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এই নিষিদ্ধ সময়ে যাতে করে সমুদ্রগামী কোন নৌযান মাছ শিকারে যেতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পাথরঘাটা স্টেশনকে বিষখালী নদী ও নৌ পুলিশ ফাঁড়ি চরদুয়ানীকে বলেশ্বর নদীর মোহনায় চেকপোস্ট স্থাপন করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধের কারণে যাতে সাধারণ মাঝি-মাল্লারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে সরকারের নজর রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম। 

তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মাঝি-মাল্লাদের পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় আনা হবে। যে কার্ডের মাধ্যমে তাঁরা সরকারের কাছ থেকে রেশনিং সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া নানা সহায়তা দেওয়া হতে পারে। যাতে তাঁরা মাছ ধরতে না গিয়ে সাগরের মত্স্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করেন।

ইত্তেফাক/এএইচপি