বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

বেড়ায় সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:২২

আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক গণফোরাম নেতা আবু সাইয়িদসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে পাবনার বেড়া মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। সাঁথিয়া উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের সেলিম হোসেন মানিক বাদী হয়ে এই মামলাটি করেছেন। শনিবার (১২ এপ্রিল) মামলাটি রেকর্ড হয়েছে বলে দেখানো হলেও রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে- গত ১ এপ্রিল বিকাল পাঁচটার দিকে বেড়া পৌর এলাকার কাগমাইরপাড়ায় অবস্থিত আবু সাইয়িদের নিজ বাড়িতে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আবু সাইয়িদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এজাহারে উল্লেখিত আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিন শ আসামি উপস্থিত ছিলেন। ওই সমাবেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন এলাকার সদস্য ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকমীরা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার ও ফ্যাসিবাদী ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র করে। সেখানে প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র, পিস্তল, বন্দুকসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতের জন্য দেশবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। মামলার সাক্ষী ও এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে আসামিদের নাম ঠিকানা জোগাড় করতে সময় লাগায় এজাহার দায়ের করতে দেরি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে মামলায় ১৬৪ জন আসামির মধ্যে আবু সাইয়িদকে এক নম্বর ও সাঁথিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মিরাজুল ইসলামকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের পাবনা-১ (সাঁথিয়া ও বেড়ার একাংশ) আসনের আওতাধীন বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরও আসামি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি জামায়াতের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার তিনজন সাক্ষীকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অলিউর রহমান বলেন, ‘এটি মামলা হিসেবে রেকর্ডভূক্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য আবু সাইয়িদ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাবনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য থাকার পাশাপাশি তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০০৮ সালে তাঁকে বাদ দিয়ে শামসুল হক টুকুকে (সাবেক ডেপুটি স্পিকার) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর পর এক পর্যায়ে তিনি (সাইয়িদ) আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বাদ পড়ে যান। ২০১৮ সালে তিনি গণফোরামে যোগ দেন এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পাবনা-১ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। সেই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হকের কাছে পরাজিত হন। এর পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গণফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। সেই নির্বাচনেও তিনি শামসুল হকের কাছে পরাজিত হন। 

২০২৪ এর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি ঢাকা থেকে তার নির্বাচনী এলাকা বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় মাঝে মধ্যে আসতেন। এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে তিনি বেড়ায় এসে কাগমাইরপাড়ায় অবস্থিত তার নিজ বাড়িতে ঈদের পরদিন (১ এপ্রিল) শুভেচ্ছা মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। সেই সভায় তার অনুসারীসহ আওয়ামী লীগের একাংশের অনেক নেতাকর্মী যোগ দেন। এতে জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কারণ তারা মনে করেন তাদের দলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের পেছনে আবু সাইয়িদের ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে আবু সাইয়িদের নেতৃত্বে তার বাড়িতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ায় বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় একাধিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তারা আবু সাইয়িদকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। 

এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার আবু সাইয়িদকে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ইত্তেফাক/এএইচপি