টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি, বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। সম্প্রতি বাংলাদেশ যতগুলো সিরিজ কিংবা ম্যাচ খেলেছে তার বেশির ভাগের ফল নির্ভর করেছে ব্যাটিংয়ের ওপরে। খারাপ হলে হারের সাক্ষী হতে হয়েছে, আর ভালো কিংবা মোটামুটি হলে জয় কিংবা লড়াই করার সাহস হয়েছে। বছরের প্রথম টেস্ট খেলার আগে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সেই ব্যাটিং ব্যর্থতার প্রসঙ্গ তুলেছেন। সেই ব্যর্থতা থেকে বের হয়ে এসে নতুন সংস্কৃতি তৈরি করতে চান এই সিরিজ থেকেই।
আজ সিলেটে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের প্রথম টেস্ট। দুই ম্যাচের সিরিজে আপাতত এই ম্যাচ ঘিরেই পরিকল্পনা করেছেন শান্তরা। গতকাল ম্যাচের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, জিম্বাবুয়ের ২০ উইকেট শিকার করতে চান তারা। তবে এই পরিকল্পনা সফল করার জন্য বোর্ডে পর্যাপ্ত রান রাখতে হবে। শান্ত সেটি জানেন। সেজন্য রান তোলার ওপরেও বিশেষ নজর রয়েছে তাদের। এক সপ্তাহের অনুশীলনও করেছেন শান্তরা। অন্যদিকে দুই দিনের পূর্ণ অনুশীলন করেই আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় রয়েছে জিম্বাবুয়ে। কিছু চ্যালেঞ্জ দেখলেও বাংলাদেশকে হারানোর স্বপ্ন দেখছেন অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। সিলেট টেস্ট নিয়ে শান্ত বলেছেন, ‘পরিস্থিতি যেমনই থাকুক, মন-মানসিকতা থাকবে জেতার। ২০ উইকেট নেওয়ার জন্য বোর্ডে যেমন রান থাকা লাগবে, সেই রান যেন আমরা ব্যাটিং ইউনিট থেকে করতে পারি, এই পরিকল্পনা রয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে যখন আমরা একটি ম্যাচ জিতেছিলাম, তখন সকলের শরীরি ভাষায় জেতার তাড়না ছিল। ঐ জিনিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ম্যাচে যেন তার ধারাবাহিকতা থাকে, সেটি নিয়েই ভাবছি আমরা।'
দুই যুগের বেশি সময় ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। কিন্তু ফরম্যাটটিতে এখনো সুবিধা করে উঠতে পারেনি দলটি। ব্যর্থতার গ্লানি হরহামেশা সহ্য করতে হয় ক্রিকেটারদের। ২০২৫ সালের প্রথম টেস্ট খেলার আগে বাংলাদেশের অধিনায়ক শান্ত বলেছেন, ‘এতো বছর টেস্ট খেলার পরও আমাদের টেস্ট সংস্কৃতি নিয়ে কথা ওঠে, ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক। তবে গত বছর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ১২টি ম্যাচের মধ্যে চারটি টেস্ট জিতেছিলাম এবং চারটি জয়ই বড় দলের বিপক্ষে। গত বছর থেকে এই দলটা একটা সংস্কৃতি তৈরি করেছে।’
তৈরি হওয়া সংস্কৃতির পিঠে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। এই বিষয়ে শান্ত বলেছেন, 'তার একটা পরিকল্পনা আছে এবং তিনি দলটাকে কীভাবে সামনে নিয়ে যেতে চান, সেটা এরই মধ্যে খেলোয়াড়দের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। পাশাপাশি আমরা যারা খেলছি, তাদের একটা ইনপুট তো ছিলই। আমি আশা করছি, এ বছর আমাদের যেই পাঁচটি ছয়টি টেস্ট ম্যাচ আছে, সেখানে নতুন কিছু দেখতে পারব।' সেই নতুন যাত্রা শুরু হচ্ছে আজকের ম্যাচ দিয়েই। ‘এর জন্য যে ধরনের মন-মানসিকতা, প্রস্তুতি থাকার কথা সেটি খেলোয়াড়রা নিচ্ছেন। যারা ম্যানেজমেন্টে আছেন, যারা ক্রিকেট বোর্ডে আছেন তারাও আমাদের সহযোগিতা করবেন। যেহেতু আমাদের ২০-২২ বছর টেস্ট ক্রিকেট একই ধরনের ছিল এবং খুব বেশি উন্নতি হয়নি তার মানে এই জায়গাটাকে নিশ্চয়ই কিছু পরিবর্তনের দরকার আছে। ঐ পরিবর্তনটাই করার চিন্তা করছি। এই পরিবর্তনটা টেস্ট ক্রিকেটে কাজে আসবে।'
এ দিকে সিলেট টেস্ট নিয়ে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের কন্ডিশন আমাদের পরিচিত না। কিন্তু এই সিরিজের জন্য আমাদের দীর্ঘ প্রস্তুতি রয়েছে, সেটি আমাদের আত্মবিশ্বাস দেবে। আমরা ভয়হীন মনোভাব নিয়ে ক্রিকেট খেলতে চাই। টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের খুব একটা ভালো পারফরম্যান্স ছিল না। তবে গেল এক বছর ধরে আমরা প্রচুর টেস্ট ক্রিকেট খেলছি। আগামী কয়েক মাসও এই ধারার মধ্য দিয়ে যাব। বাংলাদেশে আমাদের খুব বেশি অভিজ্ঞতা না থাকলেও এই ধারাবাহিক খেলার কারণে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি। সেজন্য প্রস্তুতিগতভাবে ও মানসিকভাবে পুরো দল চাঙ্গা রয়েছে। এখন এটি বাস্তবে রূপ দেওয়ার অপেক্ষা। জিম্বাবুয়েতে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এখানে আসার পরে কেবল সেই প্রস্তুতির ধারাবাহিকতা এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এ দিকে বাংলাদেশে শন উইলিয়ামস খুব ভালো করেছে। তার সেই অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে দেবে।'
এ দিকে বাংলাদেশের ট্রাম্পকার্ড হিসেবে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে নজর কেড়েছিলেন নাহিদ রানা। বল হাতে এই পেসার প্রতিপক্ষের ত্রাস হয়ে উঠতে পারেন। তবে জিম্বাবুয়ে তাকে ত্রাস হিসেবে নিচ্ছে না। শন উইলিয়ামস সেটি পরিষ্কারভাবে বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে শান্ত সবকিছু সময়ের ওপরে ছেড়ে দিয়েছেন। মাঠেই প্রমাণ পাওয়া যাবে নাহিদ রানা কেমন, এমনটাই বলেছেন টাইগার দলপতি। এই ম্যাচে গতি তারকাকে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের ওপরে বল করার বার্তা দিয়েছেন শান্ত।