দিনাজপুরের বিরলে ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। বাড়ি থেকে ডেকে নেওয়ার তিন ঘণ্টা অতিবাহিত হতে না হতেই তার পরিবারকে জানানো হয় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এরপর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। বিরল থানার ওসি মো. আব্দুস ছবুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনার শিকার ভবেশ রায় (৫৮) বিরলের শহরগ্রাম ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের মৃত তারক রায়ের ছেলে। তার স্ত্রী সান্তনা রানী বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে চার ব্যক্তি ভবেশকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। আমার স্বামীকে নাকি তারা সঙ্গে করে নাড়াবাড়ী বাজারে নিয়ে গিয়ে পান-সিগারেট খাওয়ায়।
একপর্যায়ে আমার ছেলেকে মোবাইলে কল দিয়ে বলে, তোমার বাবা পান সিগারেট খেয়ে বমি করেছে। তোমরা ফুলবাড়ী আসো। এরপর আমার ছেলে অ্যাম্বুলেন্সে দিনাজপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
ভবেশের ছেলে স্বপন রায় বলেন, বাবাকে উনারা ফোন দিচ্ছিলেন বিকাল থেকে। ৫টায় তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যান। সন্ধ্যায় বাবার ফোন থেকেই একজন আমার ফোনে কল দেন। তারা আমাকে বলেন, পান বিড়ি খেয়ে বাবা বমি করেছে। প্রেসার লো হয়ে গেছে।
ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ বিব্রতকর: পুলিশ সুপার
এদিকে, দিনাজপুরের বিরলে পূজা উদ্যাপন পরিষদের সহসভাপতি ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুর দুই দিনেও মামলা দায়ের হয়নি। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন বলেছেন, তাদের তদন্তে জানতে পেরেছেন অসুস্থতাজনিত কারণে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, তাদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য থাকলেও তারা নিয়মিত একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। একত্রে মাঝেমধ্যে মাদক সেবন করতেন। মাদকের কারণে ভিকটিম ভবেশের অনেক সম্পত্তি খোয়া গেছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাজারে চা খেয়ে পান ও সিগারেট খান তিনি। এরপর মাথা ঘুরে ভবেশ বসে পড়েন। তিনি খয়ের, চুন ও কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খেয়েছিলেন। এ সময় দোকানের একটি খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে পড়েন। পরে সেখান থেকে ধরাধরি করে পল্লিচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা বিব্রতকর। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ঘটনা যদি না ঘটে থাকে, সে বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে কোনো কিছু মিডিয়াতে প্রকাশ করা ঠিক নয়।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নিন্দা ও প্রতিবাদ
দিনাজপুরের বিরলে ভবেশ চন্দ্র রায়ের হত্যা, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে স্কুলের প্রধান শিক্ষক কান্তিলাল আচার্যকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা, রাঙ্গামাটির কাউখালীতে মারমা তরুণীর সম্ভ্রমহানির ঘটনাসহ সারা দেশে সংঘটিত নানা ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
গতকাল রবিবার রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে ঐক্য পরিষদের সভাপতিত্বে উষাতন তালুকদার, নিম নিম চন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, গত মার্চ মাসে, সারা দেশে প্রায় অর্ধশত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ, মন্দিরে হামলা, ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার, আদিবাসীদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনা রয়েছে।
ঐক্য পরিষদ নেতারা বলেন, চলমান সহিংসতা ও অস্থিরতার মধ্যে এ ঘটনাগুলো সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মাঝে আরো উদ্বেগ ও শঙ্কা সৃষ্টি করবে। তারা অবিলম্বে দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।