শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

প্রান্তিক কৃষকের অস্তিত্ব রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ চায় খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:১৪

পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে আত্মহত্যা করেছেন মেহেরপুরের এক কৃষক। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের কৃষকদের অর্থনৈতিক বঞ্চনার বিষয়টি সামনে এনে সরকারকে কৃষিপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ, মূল্য কমিশন গঠন এবং সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল ক্রয়ের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক—খানি।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের মূল্য সুরক্ষা না থাকায় তারা বারবার লোকসানের মুখে পড়ছেন, যার পরিণতিতে ঘটছে আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা। সম্প্রতি মেহেরপুরের মুজিবনগরের পেঁয়াজচাষি সাইফুল শেখের আত্মহত্যার প্রেক্ষিতে খানির তথ্যানুসন্ধানী দল মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন তদন্ত করে প্রাপ্ত তথ্য এই সম্মেলনে তুলে ধরে।

প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ২৬ মার্চ সাইফুল শেখ তার জমিতে বিষপান করেন এবং ২৮ মার্চ মারা যান। দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে তাঁর খরচ হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা, কিন্তু বিক্রি করে পান মাত্র ৫৮ হাজার। বাজারে তখন পেঁয়াজের দাম ছিল তিন গুণ বেশি।

সংবাদ সম্মেলনে সাইফুলের মেয়ে রোজেফা খাতুন বলেন, “আমার বাবা ঋণের চাপ আর লোকসানে ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি প্রতি মণ পেঁয়াজ ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন, এখন বাজারে সেটা ২০০০ টাকা। কৃষক যদি চাষ করে খাবার জোগায়, কিন্তু নিজে না খেয়ে মরতে বাধ্য হয়—তা হলে কৃষির ভবিষ্যৎ কোথায়?”

খানি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ৫টি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানায়:

১. কৃষকের উৎপাদিত ফসলের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ
২. একটি স্বতন্ত্র মূল্য কমিশন গঠন
৩. সরকারি উদ্যোগে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ফসল ক্রয়
৪. কমিউনিটি সংরক্ষণাগার ও হিমাগার নির্মাণ
৫. ফড়িয়া-মধ্যস্বত্বভোগী নির্ভরতা কমিয়ে দৃঢ় বিপণন কাঠামো গঠন

প্রতিষ্ঠানের সভাপতি কৃষি বিজ্ঞানী ড. জয়নুল আবেদীন বলেন, “আমরা হয়তো একটি কেস নিয়ে কথা বলছি, কিন্তু এর পেছনে হাজারো কৃষকের আর্তনাদ আছে। এখন দরকার এমন সংস্কার, যাতে উৎপাদক ও ভোক্তা দু’জনেই উপকৃত হয়।”

ড. মোশাহিদা সুলতানা বলেন, “সরকার যে সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেখানে কৃষির কথা নেই। কৃষকদের সুরক্ষায় পলিসি রিফর্ম জরুরি।”
ঋণের ফাঁদে কৃষক

খানি সহসভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিকী বলেন, “কৃষক যখন তার ফসল বিক্রি করতে না পেরে ভ্যান চালানো শুরু করেন, সেটাও একধরনের আত্মহত্যা। দেশের কৃষি ঋণ ব্যবস্থার দুর্বলতাও এ জন্য দায়ী।”

তিনি বলেন, “মসলা চাষে ব্যাংক সুদ ৪% হলেও এনজিও ঋণের সুদ অনেক বেশি। মৌসুমি ঋণের বদলে মাসিক কিস্তিতে ঋণ শোধ করতে গিয়ে কৃষক আরও বিপদে পড়ে।”

সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল শেখের পরিবার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোশাহিদা সুলতানা, ইনসিডিন বাংলাদেশের মুশফিক সাব্বির, একশনএইড বাংলাদেশের অমিত রঞ্জন দে, আজকের পত্রিকার সাইফুল মাসুম এবং প্রানের নির্বাহী প্রধান নুরুল আলম মাসুদ।

খানি সভাপতি ড. জয়নুলের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সম্মেলনে বক্তারা বলেন, প্রান্তিক কৃষকের কণ্ঠ এখন জাতীয় স্তরে তুলে ধরতে হবে। ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত না করলে খাদ্য নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে।

ইত্তেফাক/এনএন