২০২১ সালের মার্চে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। তারপরে পেরিয়ে গেছে ৪ বছর ও ১০ ম্যাচ, যেখানে জয়ের মুখ দেখেনি দলটি। দীর্ঘদিনের সেই জয়খরা অবশেষে কেটেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। আর ঘরের মাটি হলেও বাংলাদেশ নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে। কেননা ২০১৮ সালের পরে আরও একবার সিলেটের মাটিতে এই দলের বিপক্ষে হারতে হলো।
এই হারের পরে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরেছেন সেই মুখস্থ গদ্যে। দায়িত্ব নিতে হবে, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবেসহ নানা কথা বলেছেন তিনি, যেগুলো আগেও বলেছেন। অন্যদিকে সিলেট টেস্ট নিয়ে জিম্বাবুয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল বলে জানিয়েছিলেন অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। জয়ের পরে গতকাল জানিয়েছেন, তাদের সেই আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য সবসময় চিন্তায় থাকে বিসিবি। কীভাবে তাদের ভালো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়, সেটি নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছে ক্রিকেট সংস্থাটি। উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য বেতন বাড়ানো হয়েছে, বেড়েছে ম্যাচ ফিসহ বোনাসের অঙ্কও। কিন্তু বাড়েনি পারফরম্যান্স, সেটি যেন নিচের দিকেই যাচ্ছে। বিসিবির সবকিছু দিতে রাজি আছে, বিনিময়ে চায় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স। সেখানেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন শান্তরা। আবার এটি নিয়ে কথা তুললে গণমাধ্যমকর্মীদের খোঁচা দিতেও ছাড়েন না।
গতকাল ম্যাচ শেষে শান্তর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল আপনাদের বেতন বেড়েছে, বেড়েছে সুযোগ-সুবিধাও। আর কী কী করলে পারফর্ম করতে পারবেন। তখনই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন শান্ত। পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, 'আমাদের বেতন বেড়েছে বলে আপনারা খুশি হননি?' শান্ত জানেন তাদের কী করতে হবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে যেভাবে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছেন, সেটিই দেখতে চান ভক্তরা।
কিন্তু দিনের পর দিন যে কোনো দলের বিপক্ষে ব্যাটিং ব্যর্থতা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন দর্শকরা। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানও। সিলেট টেস্টের আগে শান্ত বলেছিলেন, দুই ইনিংসে তারা জিম্বাবুয়ের ২০ উইকেট শিকার করতে চান। কিন্তু মাঠের খেলায় হয়েছে তার উলটোটা। নিজের ব্যাটিং নিয়ে বলেছিলেন, ৩০-৪০ রান করার পরে যেভাবে আউট হন, সেটি নিয়েও কাজ করেছেন। এবার ভিন্ন কিছু করে দেখাতে চান। কিন্তু সেটিও পারেননি। প্রথম ইনিংসে ঠিক ৪০ রান করেই আউট হয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তার ওপরে দল ভরসা রাখলেও অবিবেচনাপ্রসূত শট খেলে আউট হয়েছেন। ম্যাচ শেষে বলেছেন, 'পুরো ম্যাচ আমি একা হারিয়ে দিছি, সত্যি কথা।'
শান্ত বলেছেন, 'এই ম্যাচে খুব বাজে ক্রিকেট খেলেছি।' এদিকে সিলেটের উইকেটের প্রশংসা করেছে উভয় দল। সেটিকে কাজে লাগিয়েছে জিম্বাবুয়ে, লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ম্যাচ হারের পরেও ঘরোয়া সুবিধা নেওয়ার কোনো দরকার দেখছেন না শান্ত। চট্টগ্রাম টেস্টেও স্পোর্টিং উইকেট চাইছেন তিনি। এদিকে নিজেদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের কারণ হিসেবে মানসিক সমস্যাকে দেখছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। তিনি বলেছেন, 'আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে।'
ম্যাচ শেষে কথা হয়েছে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমকে নিয়েও। বেশ কিছু ম্যাচ ধরে ভালো করতে পারছেন না মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত এই ক্রিকেটার। তবে সেটি নিয়ে চিন্তিত নন শান্ত। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হলেও মাঠে মুশফিকের অভিজ্ঞতা তাদের ভিন্ন কাজে লাগে বলে জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম টেস্টেও মুশফিককে খেলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এদিকে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন বলেছেন, 'চতুর্থ ইনিংসে এই রান তাড়া করা সহজ ছিল না। সাজঘরে আমাদের কিছুটা হলেও স্নায়ুচাপ বেড়েছিল। তবে আমাদের নজর কেবল জয়ের দিকেই ছিল। আমরা তাড়াতাড়ি উইকেট পেতে চেয়েছিলাম। শান্তকে চতুর্থ দিনের প্রথম ওভারেই আউট করা আমাদের জন্য দুর্দান্ত ছিল। আমি মনে করি, যত বেশি টেস্ট জিততে পারবো, তত বেশি সবার নজরে থাকতে পারব। টেস্ট যতই কঠিন হোক না কেন, প্রতিটি খেলোয়াড়ই খেলতে এবং আরো ভালো করতে চান। ছোট দলগুলো শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভালো ও কঠিন টেস্ট ক্রিকেট খেলতে চায়। দল হিসেবে এটাই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে আমরা উন্নতি করতে পারবো।'
আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হবে চট্টগ্রাম টেস্ট। এই ম্যাচ নিয়ে আরভিন বলেছেন, 'টেস্ট ম্যাচ জয়ের পর আমরা সত্যিই আত্মবিশ্বাসী। চট্টগ্রামে আমাদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। আমাদের মানসিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, বিশেষ করে সিলেটে জয়ের পর। আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে।'