বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

যেভাবে হজের প্রস্তুতি নেবেন 

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০০

হজ মুমিনের জন্য আল্লাহ-তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত এক প্রেমময় ইবাদত। হজের মৌসুমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলিমরা আল্লাহর নৈকট্য ও ভালোবাসা অর্জনের তাড়নায় পবিত্র কাবাশরিফের পানে ছুটে আসেন। এ সময় প্রত্যেক হজযাত্রীকে কিছু আবশ্যকীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়।

বিশুদ্ধ নিয়তের সঙ্গে আল্লাহ-তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুমিনদের মক্কা, মিনা, মুজদালিফা, আরাফা ময়দান প্রভৃতি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট দিন নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কতিপয় নির্দিষ্ট আমলের সমষ্টিকে হজ বলা হয়। জীবনে এক বারই এটা পালন করা ফরজ। এরপর যতবার পালন করা হবে, তা নফল। আল্লাহ-তায়ালা বলেন, 'আর আল্লাহর জন্য মানুষের ওপর সেই ঘরের (বায়তুল্লাহ) হজ পালন করা অত্যাবশ্যক, যে তথায় পৌঁছতে সক্ষম (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)।'

হজের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি:

যিনি হজে গমন করবেন বলে ইচ্ছে করেছেন, তাকে অবশ্যই পাসপোর্ট, ভিসা কার্যক্রম, মেডিক্যাল চেকআপ, পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রভৃতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। হজে যাওয়ার আগে পর্যাপ্ত শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা হজের সময় ভিন্ন দেশের আবহাওয়া স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘসময় ধরে গরমে হাঁটার প্রয়োজন হতে পারে।

সফরের পাথেয় সংগ্রহ:

সফরের সব পাথেয় সফরের আগে সংগ্রহ করতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে টুপি, চিরুনি, আয়না, সাবান, টুথব্রাশ, মেসওয়াক, তায়াম্মুমের মাটি, নারীদের হিজাব, নিকাব প্রভৃতি। সফরের পাথেয় সংগ্রহ করা নিঃসন্দেহে জায়েজ। আল্লাহ-তায়ালা বলেন, 'হে বনি আদম (মানবজাতি), আমরা তোমাদের ওপর অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের গোপনাঙ্গসমূহ আবৃত রাখে এবং আসবাবপত্র (যা তোমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করো), আর তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম (সুরা আরাফ: ২৬)।'

হজ এজেন্সি ব্যবস্থাপনা, খরচ ও প্যাকেজ সম্পর্কে জেনে নেওয়া:

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হলে যে এজেন্সির মাধ্যমে একজন হজযাত্রী হজে যাবেন, সে এজেন্সি সম্পর্কে জেনে নিন। এছাড়া মক্কা-মদিনায় বাসা ভাড়া, হোটেল ভাড়া, খাবার, ক কোরবানি, মুআল্লিম ব্যবস্থাপনা ও সুযোগ-সুবিধা প্রভৃতি সম্পর্কে জেনে নেবেন।

হজের মাসআলা-মাসায়েল জেনে নেওয়া:

হজে অনেক সময় মুআল্লিমের সাক্ষাৎ পাওয়া সম্ভব হয় না। ভিড়ের কারণে অনেক হাজিই নিজ মুআল্লিমকে হারিয়ে ফেলেন। এজন্য আশপাশের কোথায় হজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সে সম্পর্কে জেনে নিয়ে সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হজে গেলে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এছাড়া নিজে বই-পুস্তক পড়েও হজের মাসআলা-মাসায়েল এবং কোথায়, কখন কোন আমল করতে হবে, সে সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।

নিয়তের বিশুদ্ধতা:

প্রত্যেক আমল গ্রহণযোগ্য হওয়ার শর্ত হচ্ছে ঐ আমলের নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া। বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর জন্য করার নিয়ত ব্যতিরেকে কোনো আমলই কবুল হবে না। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভর করে (বুখারি: ১)।'

হক্কুল ইবাদত পরিশোধ:

করা হজের আগে কোনো হজযাত্রীর হক্কুল ইবাদ অপরিশোধিত থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে। ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে। কারো মনে কথাবার্তা বা কাজকর্মে কষ্ট দিয়ে থাকলে তা তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে। কারো পক্ষ থেকে কষ্ট পেলে তা মাফ করা উত্তম। সকল হক্কুল ইবাদ পরিশোধ করে দায়মুক্ত হয়ে হজ পালন করতে হবে। কেননা হাদিসে এসেছে যে, হক্কুল ইবাদ বান্দা মাফ করে দেওয়া পর্যন্ত মাফ হবে না। হজ একটি অন্তর পরিশুদ্ধকারী শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ইবাদত। ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে, এটি তাৎক্ষণিকভাবে পালনীয় ফরজ ইবাদত।

লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/এএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন