ওয়াসার পাইপ দিয়ে হালকা হলুদ, দুর্গন্ধ ও ফেনাযুক্ত পানি আসছে। সঙ্গে নতুন করে গত দুই সপ্তাহ যাবৎ জোঁকের মতো চিকন-লম্বা জীবন্ত পোকাও আসছে। ওয়াসার লালমাটিয়া জোন অফিসে বাসার ট্যাপ, ওয়াটার ট্যাংক এবং মেইন সাপ্লাই পাইপের পানির নমুনা সংগ্রহ করে প্রমাণস্বরূপ জমা দেওয়া হয়েছে। তবু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আনিছ হক জানিয়েছেন কথাগুলো। রাজধানীতে গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন এলাকায় এমন দুর্গন্ধ ও পোকাযুক্ত পানি এলেও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না ওয়াসার পক্ষ থেকে। তারা শুধু বাড়ির পানির ট্যাংক পরিষ্কার করার জন্য বাসিন্দাদের অনুরোধ করছেন।
শুধু মোহাম্মদপুর নয়, রাজধানীর কল্যাণপুর, তেজগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, মধুবাগ, বাসাবো, মানিকনগরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে ওয়াসার পানির সঙ্গে পোকা আসছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানান, কোথাও এক মাস আগে থেকে, কোথাও আবার ২০ দিন ধরে, কোনো কোনো এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে এ সমস্যা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার জানিয়েছেন, তিন মাস আগে থেকেই হঠাৎ হঠাৎ পানিতে এমন পোকা দেখা গেলেও এপ্রিল মাস জুড়ে পানিতে পোকার পরিমাণ বেড়ে গেছে।
মুগদার মানিকনগর এলাকার মিয়াজান লেনের বাসিন্দা কেয়া আক্তার। তিনি ৬ এপ্রিল 'মানিকনগর' নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে পানির সমস্যা নিয়ে পোস্ট দেন। এতে তিনি লেখেন, 'পানির ভেতর কেঁচোর বাচ্চা। লাল ও ছোট লম্বা সুতার মতো পোকা। কী যন্ত্রণায় আছি। এর কি কোনো সমাধান হবে না?'
খিলগাঁওয়ের তারাবাগ এলাকার ১ নম্বর সড়কের বাসিন্দা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সোহেলি বেগম বলেন, পোকার কারণে বাড়িওয়ালা ট্যাংকও পরিষ্কার করিয়েছেন। কোনো লাভ হয়নি।
মোহাম্মদপুরের আরেক বাসিন্দা বলেন, 'নিয়মিত ওয়াসা বিল পরিশোধ করে আমরা এরকম নিম্নমানের পোকাযুক্ত দূষিত পানি কেন পাব? তাদের এই দূষিত পানির কারণে এলাকার মানুষ পেটের পীড়া এবং চর্মরোগে ভুগে হাসপাতালে যাচ্ছে, তার দায়ভার কে নিবে?'
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাইপলাইনে পোকা পাওয়া মানেই লাইনের কোথাও ফাটল বা রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি আছে। পোকাযুক্ত পানি ব্যবহার করলে ত্বকে সংক্রমণ, পেটের অসুখসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা এই পানি খেলে মারাত্মক অসুখ হতে পারে।
ঢাকা ওয়াসার একজন কর্মকর্তা জানান, এ সময়ে নদীর পানি দুর্গন্ধ ও পোকা বেশি থাকে। ফলে ট্রিটমেন্টে অতিরিক্ত কেমিক্যাল দিতে হয়। ট্রিটমেন্টে কোথাও সমস্যা হলে লাইনে দুর্গন্ধযুক্ত পানি যেতে পারে। এ ছাড়া ঢাকার অনেক জায়গায়ই ওয়াসার লাইনে লিকেজ রয়েছে, যেখানে এই সমস্যা ঘটতে পারে। তাছাড়া অবৈধ সংযোগের কারণেও পানির সমস্যা হতে পারে।
ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) এ কে এম শহীদ উদ্দিন বলেন, 'আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসছে। আমরা লোক পাঠিয়ে চেক করিয়েছি; কিন্তু সরবরাহ লাইনের পানিতে কোনো সমস্যা পাইনি। আমাদের পরিশোধিত পানিতে ক্লোরিন মিক্স করে পাঠানো হয়। ফলে এমন পোকা থাকলেও তা মরে যাওয়ার কথা। তিনি বলেন, ওয়াসার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টগুলোর পানি নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। কোথাও পানিতে সমস্যা পাইনি।'