মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

১০ গ্রাহকের ৩ কোটি টাকার আমানতের জাল রসিদ! 

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকদের হয়রানির অভিযোগ 

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১২

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার জয়পাড়া দোহার শাখার অন্তত ১০ জন গ্রাহকের স্থায়ী আমানতের ৩ কোটি টাকা প্রদানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা। 

তারা বলছেন, ৩ কোটি টাকার আমানতের জাল রসিদ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যবস্থাপক। এখন এর দায়ভার ব্যাংকটি না নিয়ে উলটো গ্রাহকদের হয়রানি করছে। জমানো টাকা না পেয়ে পথে বসেছেন বলে জানিয়ে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। 

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। 

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে ঢাকার দোহারের বিলাশপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা বলেন, আমি সাবেক জনপ্রতিনিধি ও একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের জয়পাড়া শাখায় পুরোনো অ্যাকাউন্ট সচল করতে গেলে তৎকালীন ম্যানেজার শহিদুল ইসলামের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে তার রুমে বসে সরল বিশ্বাসে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেসার্স লাকি এন্টারপ্রাইজের অ্যাকাউন্টের নগদ ৫ লাখ ও সোনালী ব্যাংক জয়পাড়া শাখার একটি ৮৭ লাখ টাকার চেক জমা প্রদান করি। তখন ম্যানেজার আমাকে মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিট (এমটিডিআর) প্রদান করেন। 

তিনি বলেন, আমি ম্যানেজারের কথায় বিশ্বাস করে পুনরায় বিনিয়োগসহ ১ কোটি টাকার এক মাস মেয়াদি মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট করে রিসিট গ্রহণ করি। প্রায় এক মাস পর গত মার্চ মাসের ৩ তারিখে আমানতকৃত টাকা নগদায়নের জন্য ব্যাংকের শাখায় গেলে টাকা প্রদানের জন্য কর্তৃপক্ষ আমার কাছে পাঁচ দিন সময় নেন। পরে ঐ শাখার নতুন ম্যানেজার আমাকে একটি চিঠি ইস্যু করেন যে, আমার মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিটটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে ইস্যু করেননি, যা উক্ত রিসিটটি জাল। এ কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে যাই। আমি নতুন ম্যানেজারকে অবহিত করি যে, শাখায় সাবেক ম্যানেজার শহিদুল ইসলামের হাতে আমি চেক ও নগদ টাকা দিয়ে আমানতের চেক গ্রহণ করেছিলাম। ব্যাংক ম্যানেজার জালিয়াতি করলে তার দায়ভার ব্যাংককে নিতে হবে। কিন্তু জয়পাড়া শাখা কর্তৃপক্ষ আমার কোনো কথায় কর্ণপাত করেনি।

তিনি আরও বলেন, পরে জানতে পারি, একই শাখায় আবুল হোসেনের ২০ লাখ টাকা, মাহমুদা আক্তার লাকির ৩০ লাখ টাকা, বোরহানুল হক ৩০ লাখ, জামাল আহম্মেদের ১৫ লাখ, রোকছানা আক্তারের ৪৫ লাখ, ফাতেমা আক্তারের দুইটি ডিপজিট থেকে ৩২ লাখ টাকাসহ মোট ৩ কোটি টাকা জাল মানি রিসিট দিয়ে প্রতারণা করেন সাবেক ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম। এ বিষয়ে বর্তমান শাখা ম্যানেজার আব্দুল রাকিব তালুকদার ও ডেপুটি ম্যানেজার দোহার থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। 

তিনি জানান, ঐ শাখার বর্তমান ম্যানেজার মিজানুর রহমানও আমাকে সহযোগিতা করছেন না। শাখার সিসিটিভিতে উক্ত ঘটনার সকল প্রমাণাদি রয়েছে। সেই ধারণা থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সরবরাহ ও সংরক্ষণের জন্য আবেদন করি। বর্তমান ম্যানেজার মিজানুর রহমান উক্ত সিসিটিভির ফুটেজ আমাকে সরবরাহ করবে না মর্মে জানান। এতে আমার সন্দেহ হচ্ছে, বর্তমান ম্যানেজারসহ ব্যাংকের আরও কর্মকর্তা আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া জালজালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। 

সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ভুক্তভোগী গ্রাহক রোখসানা আক্তার, আবুল হোসেন, মাহমুদা আক্তার লাকি, বোরহানুল হক, জামাল আহমেদ ও ফাতেমা আক্তার।

ইত্তেফাক/টিএইচ