বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ 

ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ৯২ শতাংশ রোগী তিন পার্বত্য জেলার 

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৭

পার্বত্য জেলাগুলো দুর্গম এলাকায় হওয়ায় বর্ষাকালে ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিয়মিত রেকর্ড সংরক্ষণ করা কঠিন হয়। সঠিক সময়ে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা যায় না। এসব কারণে অ্যানোফিলিস মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়া নির্মূল কঠিন হচ্ছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। 

তারা বলছেন, দেশে অ্যানোফিলিস মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর ৯২ শতাংশই তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দা। জেলাগুলো হলো- বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি। আক্রান্ত ও মৃত্যুহার সর্বাধিক হওয়ায় জেলাগুলোকে উচ্চ ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। দেশের দক্ষিণ এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী ১৩টি জেলার ৭৭টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব এখনো বেশি। 

জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দেশে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ও ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হ্রাসের ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ম্যালেরিয়াজনিত অসুস্থতা শতকরা ৮৫ ভাগ এবং মৃত্যু শতকরা ৯৬ ভাগ কমেছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ মোট ম্যালেরিয়া রোগী ছিল ১৩ হাজার ৯৯ জন ও মৃত্যুবরণ করেছে ছয় জন। ২০২৩ সালে শনাক্ত হয়েছিল ১৬ হাজার ৫৬৭ জন এবং মারা যান ছয় জন। 

অধিদপ্তর আরো জানিয়েছে, ম্যালেরিয়া নির্মূলের আওতাধীন ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের আটটি জেলায় মোট স্থানীয় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ছয় জন। আটটি জেলার মধ্যে ছয়টি জেলায় (কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা, শেরপুর, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ এবং সিলেটে) স্থানীয় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা শূন্য। 

দেশের এমন বাস্তবতায় সারা বিশ্বের মতো আজ ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে-'আমরাই করব ম্যালেরিয়া নির্মূল: নব উদ্যমে, নব বিনিয়োগে ও নব চিন্তায়।' 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ক্রস বর্ডার তথা সীমান্ত অতিক্রম করে অনেকে ভারত ও মিয়ানমারে চলাচল করছে। কখনো কখনো পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় অশান্ত হওয়ায় বিধিনিষেধ থাকে। পাহাড়ি আদিবাসীদের ভাষা বোঝা ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ধর্মীয় কুসংস্কার রয়েছে। এসব কারণেও সেখানে ম্যালেরিয়া নির্মূল কঠিন হচ্ছে।
 
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠনের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, অ্যানোফিলিস মশা আর্দ্রতা মিশ্রিত ছায়াযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকে। এরা মানুষ ও গবাদি পশুর রক্ত বেশি পছন্দ করে। পূর্ণাঙ্গ মশা দল বেঁধে উড়ে বেড়ায়। এই মশা ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী প্লাজমোডিয়াম নামক প্রোটোকটিস্ট জীবাণুর বাহক হিসেবে কাজ করে। 

এদিকে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০২৬ সালে সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ম্যালেরিয়া মুক্ত ঘোষণার পরিকল্পনা চলছে। ২০২৭ সালের মধ্যে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়া রোগী প্রতি ১ হাজারের মধ্যে ১-এর নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/টিএইচ