প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন রাজধানীর নিয়মিত দৃশ্য। মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক সবই নিয়ম না মেনেই যত্রযত্র চলছে। এর সঙ্গে প্রধান সড়কে মিনিবাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, সরকারি-বেসরকারি গাড়ি নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা দেখা যায়। দিন যত যাচ্ছে, রাজধানীর সড়কের বিশৃঙ্খলা যেন ততই বাড়ছে। ফলে সড়কে তীব্র যানজটের সঙ্গে বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। ট্রাফিক আইনও মানছে না অনেকেই। বিশেষ করে বাইকার ও ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। যানজটের ঢাকায় এক সময় অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যের বাহন ছিল মোটরসাইকেল। যানজট এড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে সবচেয়ে কার্যকর। কিন্তু এ মোটরবাইক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংখ্যায় বেড়েছে কয়েক গুণ। যানজট হলেই ফুটপাত মোটরসাইকেলের দখলে চলে যায়। নিয়ম-কানুন তাদের মানতে দেখা যায় না। কে কত দ্রুত আগে যেতে পারে এটাই যেন তাদের একমাত্র লক্ষ্য। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। বাড়ছে প্রাণহানি।
ঢাকা শহরের সড়কে যানবাহন চলাচলের চিত্র পর্যালোচনা করলে এমন চিত্র দেখা যায়। এ শহরে দৈনন্দিন কাজে বাসা থেকে বের হতে হয় প্রায় সবাইকে। অথচ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকার অভিজ্ঞতা হয়নি-এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাজধানী হওয়ায় ব্যস্ততা থাকবে, তাই বলে সড়কে অরাজকতা; বিষয়টি কেউ মেনে নিতে পারছে না। রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলোয় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকদের মধ্যে নিয়ম না মানার প্রবণতা বেশি। নির্দিষ্ট প্রধান সড়কগুলোয় রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এসব সড়কে নির্বিঘ্নে চলছে রিকশা।
ফুটপাতে উঠে পড়ার প্রবণতা মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে আগে থেকেই আছে। সম্প্রতি সে প্রবণতা আরো বেড়ে গেছে। এ ছাড়া সিগন্যাল অমান্য করে যানজটের সৃষ্টি করা, উলটো পথে ঢুকে পড়া, পথচারীদের পদচারীর সেতু না ব্যবহার করা-এসব অনিয়ম সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। রাজধানীর ব্যস্ততম কিছু সড়ক ও মোড় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
নগরীর নীলক্ষেত মোড়ে দেখা যায়, একটি সিগন্যাল বন্ধ করে আরেকটি ছাড়ার আগেই অন্যপাশ থেকে গাড়িগুলো চলে আসছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কেউ কাউকে সুযোগ না দিয়ে নিজে আগে যাওয়ার চেষ্টায় মত্ত। এ প্রবণতা রিকশাচালক ও মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে বেশি দেখা গেছে। নীলক্ষেত থেকে আজিমপুর যাওয়ার রাস্তায় কিছু রিকশা উলটো সড়কে আসতে দেখা যায়। বাধা দিতে গেলে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করে কেউ কেউ। পথচারীদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। পদচারী-সেতু থাকার পরও অনেকে সরাসরি ব্যস্ত সড়ক হেঁটে পার হচ্ছে।
আইন ভাঙার কারণ জানতে চাইলে অনেকেই জরুরি কাজের অজুহাত দেন। কেউ কেউ আবার পুলিশের ব্যর্থতাকে দোষারোপ করেন। এমনই একজন রিকশাচালক বলেন, একটা-দুইটা গাড়ি এমন যায়ই। এর কারণে তো আর জ্যাম হয় না। যখন জ্যাম থাকে তখন এরকম করি না। প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল তো পুলিশের সামনে দিয়েই যায়, তাদের বেলায় তো পুলিশ কিছু বলে না।
নীলক্ষেত এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বরত এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যেও এ প্রবণতা রয়েছে। তিনি বলেন, বাধা দিতে গেলে আমাদের কনস্টেবলদের সঙ্গে অনেকেই খারাপ আচরণ করেন। এ ছাড়া নিউমার্কেট ও নীলক্ষেত সড়কের মধ্যে ডিভাইডারে রেলিং নেই। পথচারীরা এখান-সেখান দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে।
রামপুরা টিভি সেন্টারসংলগ্ন রাস্তায় একমুখী সড়কে উলটো পথে আসা এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, এদিক দিয়ে সব গাড়িই উলটো পথে আসে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, এমনকি ট্রাকও। টিভি রোডে ঢোকার জন্য ঐ বরাবর কোনো ইউটার্ন নেই। তাহলে উলটো আসবে না তো কী করবে? মূল সড়কে রিকশার চলাচল প্রসঙ্গে শাহবাগ জোনের ট্রাফিক পরিদর্শক বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী আমাদের জনবল নেই, তাই সমস্যাগুলো বাড়ছে।
এ ব্যাপারে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সারওয়ার বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নিচ্ছি। তা না হলে তাদের কারণে নগরীর প্রধান সড়কে চলাচল পড়ত।