রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

অনুমতি না নিয়েই শ্রমিক দল নেতার মেলা আয়োজন, চলছে জুয়া

আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ২০:২৬

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় জেলা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই মেলার নামে প্রকাশ্যে জুয়ার আয়োজন করেছে শ্রমিক দল নেতা দাবিদার পলাশ শেখ নামে এক ব্যক্তি। জেলা প্রশাসনের অনুমতি না পেলেও ঐ ব্যক্তি প্রশাসনের অনুমতির জাল একটি কাগজ দেখিয়ে এ মেলার আয়োজন করে। তাকে একাজে ফতুল্লা থানা বিএনপির প্রভাবশালী কয়েক নেতা নেপথ্যে থেকে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

সন্ধ্যার পর থেকে ঐ মেলায় উঠতি বয়সের ছেলেরা জুয়া খেলতে ভিড় জমায়। মেলাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে অবাধে মাদকের বিকিকিনি। গত ২০দিন যাবত মেলার আয়োজকদের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। অনুমোদন না থাকায় মধ্যখানে একবার মেলা বন্ধ করে দেয় ফতুল্লা থানা পুলিশ। এরপরেও প্রভাব খাটিয়ে মেলা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ ফতুল্লা থানার কুতুবপুর ইউনিয়নের দেলপাড়া টাওয়ারপাড় এলাকায় বিএনপির প্যাডে ঈদ মেলা আয়োজনের কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন পলাশ শেখ। আবেদনপত্রের নিচে নিজের পদবী উল্লেখ করেন ফতুল্লা থানা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। শ্রমিক দল নেতা হয়ে বিএনপির প্যাডে মেলা আয়োজনকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হিসেবে দেখছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। জেলা প্রশাসকের কাছে মেলার আবেদন করলেও জেলা প্রশাসক সেই মেলার অনুমতি দেননি। অনুমতি না পেয়ে পলাশ কৌশলের আশ্রয় নেন। তারা তাদের আবেদনপত্রের একটি অনুলিপির নিচে জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নামহীন সীল মোহর ও অনুস্বাক্ষর দিয়ে প্রচার করতে থাকেন যে তারা মেলার অনুমতি পেয়েছেন। 

জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন কারও আবেদনপত্রে অনুমতি দেন না। অনুমতি দিলে জেলা প্রশাসন আলাদা ভাবে চিঠি দিয়ে অনুমতির বিষয়টি অবহিত করে এবং তার অফিস কপি সংরক্ষিত থাকে। এক্ষেত্রে তার কিছুই নেই। 

দেলপাড়া টাওয়ারপাড় এলাকাবাসী জানান, ফতুল্লা থানা বিএনপির কয়েকজন নেতা এ মেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের নেতৃত্বেই মেলার নামে জুয়ার আয়োজন করেছে পলাশ শেখ। এ মঞ্চের পাশেই স্থানীয় একাধিক মাদক ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে মাদকের কারবার শুরু করছেন। দেলপাড়া টাওয়ারপাড় এলাকার এ মেলায় সাধারণ লোকজন আসে না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। যারা এ মেলায় আসছেন তাদের বেশিরভাগই জুয়া বা মাদক ক্রয়ের জন্য আসছেন।

মেলায় জুয়ার বিষয়টি আড়াল করতে ‘দৈনিক বন্ধু র‌্যাফেল ড্র’র আয়োজন করা হয়। তার পাশেই প্যান্ডেলে ঢাকা স্থানে চলে বিভিন্ন ধরণের জুয়া খেলা। জুয়া খেলা নির্বিঘ্ন করতে মেলার চারপাশে থাকে আয়োজকদের অনুগত ক্যাডার বাহিনী। কেউ মোবাইল বা ক্যামেরা বের করলেই তাকে হেনস্থা করা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে সারারাত জুয়া খেলা চলে। 

মেলার বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে ফতুল্লা থানা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক শাহআলম বলেন, পলাশ শেখ নামে আমাদের থানা শ্রমিক দলে কোনো নেতা বা কর্মী নেই। আমাদের আহ্বায়ক কমিটি দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। পলাশ শেখের বিরুদ্ধে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযুক্ত পলাশ শেখ নিজেকে থানা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক দাবি করে বলেন, জুয়া বলতে র‌্যাফেল ড্র হয়। এটা জুয়ার মধ্যে পড়ে না। অন্য কোনো জুয়া খেলা বা মাদক ব্যবসা চলে না। মেলার বাইরে কেউ মাদক ব্যবসা করলে সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। 
ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু বলেন, ফতুল্লা থানা শ্রমিক দলের আহবায়ক কমিটি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। পলাশ শেখ নামে কোন শ্রমিক দল নেতাকেও তিনি চেনেন না।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শরিফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ অভিযান চালিয়ে একবার মেলা বন্ধ করেছে। এবার তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, এ ধরণের একটি অননুমোদিত মেলার খবর পেয়ে সেটি বন্ধ করা হয়েছিল। আবারো চালু হয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ এ ধরণের কোন মেলার আয়োজন জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়নি। 

ইত্তেফাক/এএইচপি