‘নরকপ্রাপ্তি” শুনেই পিলেচমকে ওঠার মতো অবস্থা! আসলে অধঃপতন শব্দটার সমর্থক হিসেবে নরকপ্রাপ্তি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের এমনই অবস্থা সেখানে অধঃপতন শব্দটা ব্যবহার করলে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝানো সম্ভব না, নরকপ্রাপ্তি যেন সেটা খাপখাইয়ে নিচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা যায় ১৯ বছর পর এই প্রথম বারের মতো আইসিসির ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের এমন বেহাল অবস্থা । যেই ফরম্যাটকে বরাবরই নিজেদের শক্তির জায়গা বলে আসছিলেন লাল- সবুজের প্রতিনিধিরা। সেখানেই যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে । আর গতকাল তো সব কিছু ছাপিয়ে র্যাংকিংয়ের তলানিতে গিয়ে ঢুকেছে ।
দেশের ক্রিকেটে চলছে ব্যস্ততা। অনুর্ধ্ব ১৯ দল খেলছে শ্রীলঙ্কায়, রাজশাহীতে ব্যাস্ত বাংলাদেশ ইমাজিং দল ও সিলেটে বাংলাদেশ 'এ' দল । জাতীয় দলেও চলছে ব্যস্ততা। চলতি মাসে দুই দেশ সফর করবে লিটন- শান্তরা। খেলবে সাতটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সেই লক্ষ্যে দল সোমবার থেকে শুরু করেছে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলন ক্যাম্প শুরু করেছে। এরমধ্যেই ভেসে এসেছে এক খারাপ খবর ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইসিসি) গতকাল তাদের ওয়েবসাইটে বার্ষিক র্যাংকিং হালনাগাদ করেছে, যেখানে ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ এক ধাপ পিছিয়ে এখন ১০ম স্থানে রয়েছে ।
২০০৬ সালের পর এবারই প্রথম দশম স্থানে এসেছে। যদিও ১৯ বছর আগে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের জন্য ১০ দশম স্থান অনেক বড় প্রাপ্তি ছিল। তবে এবার আর এটা প্রাপ্তি নয়। এবার এটা দলের জন্য এক অশনিসংকেত। গেল বছর তিন ম্যাচের তিনটি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে একটি সিরিজেই ছিল ঘরের মাটিতে। আর সেটি জিতেছিল শান্তর দল । প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা । তাদের হারিয়েছিল ২-১ ব্যবধানে । তবে ঐ সিরিজটা র্যাংকিংয়ের হিসেবে পরেনি। কেননা সিরিজটি অনুষ্ঠিত হয়েছে মার্চ মাসে । আর আইসিসি হিসাব করেছে মে মাস থেকে। ঐ হিসাব করলে সবশেষ ১২ মাসে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ খেলেছে দুটি সিরিজের ছয়টি ম্যাচ। যার মধ্যে জিতেছে মাত্র একটিতে । তাতেই লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের পুড়েছে কপাল। সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই হয়ে চার রেটিং পয়েন্ট হারিয়ে লাল-সবুজের বর্তমান পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ৭৬। অন্যদিকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাঁচ পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮৩ পয়েন্টে পৌঁছে গেছে এবং তারা ৯ম স্থানে উঠে এসেছে।
আইসিসির ওয়েবসাইটে ২০ দল নিয়ে সাজানো হয়েছে ওয়ানডে র্যাংকিং। যার মধ্যে বাংলাদেশের পর যারা রয়েছে তাদের ক্রিকেটে শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। সেই বিবেচনায় এক কথায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের বর্তমান অবস্থা তলানিতেই বলা যায় । সবশেষ এই র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ভালো অবস্থান ছিল ২০২২ সালে । ঐ বছর দক্ষিণ আফ্রিকাকে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে হারানোর পর ছয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। যদিও সেটাই প্রথম বার ছিল না এর আগে ২০১৭ সালেও এই অবস্থানে এসেছিলেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এরপর সাত-আট-নয় এই অবস্থানের মধ্যেই থাকতেন। তবে ২০০৬ সালের পর কোনোবারই দশম স্থানে ছিলেন না। তবে গেল কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে দলের পারফরম্যান্সের অবনতি যে দলকে এমন জায়গায় টেনে নিয়ে যাবে, তা অনুমেয়ই ছিল।
যদিও ওয়ানডেতে ডিমোশন হলেও টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের র্যাংকিংয়ে নিজেদের আগের অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ। টেস্টে ৬২ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে এবং টি-টোয়েন্টিতে ২২৫ পয়েন্ট নিয়ে তারা ৯ম স্থানে রয়েছে। বার্ষিক হালনাগাদ র্যাংকিংয়ে ২০২৪ সালের মে মাস এখন পর্যন্ত হওয়া সব ম্যাচের ফলের গুরুত্ব ১০০ ভাগ ধরা হয়েছে। এর আগের দুই বছরের ম্যাচগুলোর ফলের গুরুত্ব কমে হয়েছে শতকরা ৫০ ভাগ। যার অর্থ সাম্প্রতিক সময়ে খারাপ করার কারণেই বাংলাদেশ ওয়ানডে র্যাংকিং পড়ে গেছে। এদিকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি—এই দুই ফরম্যাটে ভারত শীর্ষে আছে, আর টেস্টে সবার ওপরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টেস্ট র্যাংকিংয়ে ইংল্যান্ড বড় সাফল্য পেয়েছে; তারা ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলে এখন দ্বিতীয় স্থানে । এছাড়া নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা তিনটি ফরম্যাটেই উন্নতি করেছে।