বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের অপসারণের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৬ মে) বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
পরে বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভবনের বাইরে বের করে দিয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন। আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম শাট ডাউন ঘোষণা করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী এবং ট্রেজারার ড. মো. মামুন অর রশিদ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
এছাড়াও আগামীকাল বুধবার বেলা ১২টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে উপাচার্যের বাসভবনে বিদ্যুতসহ সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে নানা দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু উপাচার্য কোনো কিছুর প্রতি কর্ণপাত করেননি। তিনি স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণ করছেন। উপাচার্যের অপসারণের এক দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সকল দপ্তরে তালা দেওয়া হয়েছে। আমাদের এক দফা বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মৃত প্রশাসনের প্রতিকী কফিন নিয়ে রাখা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও জরুরি সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কাল বুধবার বেলা ১১ টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় অবস্থান নেবে। শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকতে হবে। সেখানে তারা শিক্ষার্থীদের জরুরি সেবা দিবেন। বেলা ১২টরার মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করলে তার বাসভবনের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধসহ সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হবে।
আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এস. এম. ওয়াহিদুর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর সম্মতিতে আমরা প্রশাসনিক শাট ডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে পাঁচটি বিভাগ উপাচার্যের পদত্যাগের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে, তবে আমরা আশা করি অন্য বিভাগগুলোও বিবৃতি দেবে। একাডেমিক কার্যক্রমও আমরা বন্ধ করে দেব এবং শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনে আমরণ অনশনেও যাব।
আন্দোলনকারী এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমরা একদফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে আছি। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব, যদি উপাচার্য পদত্যাগ না করেন।
প্রসঙ্গত, শুরুতে শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন। পরে আন্দোলনরত ১০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরই মাঝে ক্যান্সারে আক্রান্ত এক শিক্ষার্থী উপাচার্যের কাছে আর্থিক সহায়তার জন্য পাঁচ মাসে তিনবার আবেদন করেও কোনো সাড়া পাননি। পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত রূপ নেয় এবং শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।