বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

‘পেহেলগাম’ থেকে ‘অপারেশন সিন্দুর’: কোন দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি?

আপডেট : ০৭ মে ২০২৫, ১৫:২০

কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সংঘটিত সশস্ত্র হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় গত মধ্যরাতে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে বিমান হামলা চালায়।

এই অভিযানে ভারত পাকিস্তানের নয়টি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। পাকিস্তান এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বৃহৎ যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

হামলার পটভূমি

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামের বাইসারান উপত্যকায় বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এই হামলার জন্য ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামে একটি গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে। এদের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছে নয়াদিল্লি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিশোধের নেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপও নেয় নয়াদিল্লি।

তবে পাকিস্তান ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, হামলাটি ভারতের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং’ (র) কর্তৃক পরিকল্পিত ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়া একটি কথিত নথির বরাত দিয়ে দাবি করা হয়েছে, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল 'পাকিস্তানের ওপর দায় চাপিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করা' এবং 'কাশ্মীর ইস্যু থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরানো'।

ভারতের সামরিক পদক্ষেপ

গত রাতে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারতীয় সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলা 'সন্ত্রাসী ঘাঁটি' লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছে এবং কোনো সামরিক স্থাপনাকে নিশানা করা হয়নি।

তবে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, এই হামলায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তান এই হামলাকে ‘আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি পাল্টা অভিযানের নামও ঠিক করেছে বলে জানা গেছে।

এর আগে, পাকিস্তানের ফেডারেল তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছিলেন, ভারত ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হামলা চালাতে পারে। এই আশঙ্কার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করে এবং ৪০-৫০টি যুদ্ধবিমান (এফ-১৬, জেএফ-১৭, জে-১০সি) মোতায়েন করে। এই প্রস্তুতির ফলে ভারতের একটি পরিকল্পিত হামলা ব্যর্থ হয়েছিল বলে দাবি করা হয়।

বৃহৎ যুদ্ধের সম্ভাবনা

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই উত্তেজনা বৃহৎ যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত এবং অতীতে কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ১৯৪৭, ১৯৬৫, এবং ১৯৭১ সালে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৯৯ সালের কার্গিল সংঘর্ষও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

পাকিস্তানের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মঈদ ইউসুফ আল জাজিরার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'ভারতের সঙ্গে বড় ধরনের যুদ্ধের সম্ভাবনা কম, তবে সংঘর্ষের ঝুঁকি অস্বীকার করা যায় না। দুই দেশের মধ্যে কার্যকর সংকট মোকাবেলার ব্যবস্থা না থাকায় যে কোনো সংঘাত হঠাৎ বড় আকার ধারণ করতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, কাশ্মীর ইস্যু সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত ব্যবস্থার অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।

ভারতের অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেজেএস ধিলন বলেছেন, আমাদের হামলা সন্ত্রাসী নেতাদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছে এবং এটি যুদ্ধের সূচনা নয়। তবে পাকিস্তান যদি পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে তা যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি ভারতের সামরিক প্রস্তুতির ওপর আস্থা প্রকাশ করলেও সংযমের পরামর্শ দিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, পাকিস্তানের দ্বারা পেহেলগাম হামলা হয়েছে - এর জোরালো প্রমাণ না থাকায় ভারতের হামলা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ন্যায্যতা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। এছাড়া, দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে টানা গোলাগুলি, আকাশসীমা নিষিদ্ধকরণ এবং বাণিজ্য বন্ধের মতো পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করবে।

ইত্তেফাক/এসকে