দুই লেগ মিলিয়ে ১৩ গোলের থ্রিলার শেষে সান সিরোতে বুনোউল্লাস করে নেরাজুরিওরা। এই উল্লাস শেষ তিন আসরে দুবার ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করার আনন্দ। ম্যাচ শেষে স্বাগতিক খেলোয়াড়রা যখন নিজেদের সমর্থকদের সঙ্গে জয় ভাগাভাগিতে ব্যস্ত, তখন অন্যদিকে অশ্রুশিক্ত চোখে মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ইয়ামাল-রাফিনিয়া-লেভানন্দোভস্কিরা। দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর এগিয়ে গিয়েও ফাইনালে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারায় হতাশা ভর করে কাতালান শিবিরে। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত লড়েছে বার্সা। তবে প্রতিবারই আটকে গিয়েছে ইন্টারের শেষ স্তম্ভে; ইয়ান সামারের অদৃশ্য দেওয়ালে।
সান সিরোতে নামার আগ পর্যন্ত ফাইনাল খেলার দৌড়ে এগিয়ে ছিল হ্যান্সি ফ্লিকের দল। তবে ইন্টার যে ঘরের মাঠে সহজ প্রতিপক্ষ নন, সেটা আগেই বলেছিলেন বার্সা বস। মাঠে সেটারই প্রতিফলন দেখালেন লাউতারো বাহিনী। প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বিরতির পর গার্সিয়া-ওলমোর গোলে সমতায় ফিরেছিল কাতালানররা। এরপর নির্ধারিত সময়ের তিন মিনিট বাকি থাকতে রাফিনিয়ার গোলে লিড পায় বার্সা। তখন নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা সান সিরো।
তবে অতিরিক্ত সময়ে ফ্রান্সেস্কোর গোলে সমতায় ফেরার পর নতুন করে ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখতে থাকে ইন্টার সমর্থকরা। অতিরিক্ত সময়ে ফ্রান্ডেসির গোলে স্বাগতিকদের স্বপ্ন রূপ নেয় বাস্তবে। নেরাজুরিওরা নিশ্চিত করে চ্যাম্পিয়নস লিগের নিজেদের সপ্তম ফাইনাল। এর আগে সবশেষ ২০২২-২৩ মৌসুমের ইতালিয়ান জায়ান্টরা ফাইনাল খেললেও ম্যানচেস্টার সিটির কাছে হারে ছোঁয়া হয়নি শিরোপা।
তবে এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের চতুর্থ শিরোপা জয়ের সুযোগ দেখছেন ইন্টার বস সিমোন ইনজাঘি। এছাড়াও এমন দলের কোচ হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন তিনি। ম্যাচ শেষে বার্সার বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে তিনি বলেন, 'প্রথমে বার্সেলোনাকে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। তারা সত্যিই একটি শক্তিশালী দল। তবে ইন্টারের জন্য এটি ছিল দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। ছেলেদের ধন্যবাদ, তারা দুই লেগে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে। অন্যথায় আমরা ফাইনালে উঠতে পারতাম না। তাদের কোচ হতে পেরে আমি গর্বিত ও খুশি। তারা আমাকে তাদের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে।'
অন্যদিকে পুরো মৌসুমে দুর্দান্ত থাকার পর সেমিফাইনালে হেরে শিরোপা ছোঁয়ার স্বপ্ন আরো দীর্ঘ হলো কাতালানদের। তাতে শিরোপা পুনরুদ্ধারের অপেক্ষা বাড়লো বার্সেলোনার। এই নিয়ে অষ্টমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। এছাড়াও সেমির দুই লেগ মিলিয়ে গোল হয়েছে ১৩টি। ২০১৭-১৮ সালে লিভারপুল ও রোমার ম্যাচের পর থেকে এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের সর্বোচ্চ গোলের ম্যাচ এটি।
এমন হারের পর হতাশ হলেও শিষ্যদের পারফরম্যান্সে খুশি হ্যান্সি ফ্লিক। তিনি বলেন, 'আমি হতাশ, তবে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে নয়। তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে এবং ভালো খেলেছে। আমরা ছিটকে পড়েছি কিন্তু আমরা আগামী মৌসুমে আবার চেষ্টা করব। আমরা ভক্ত ও ক্লাবকে গর্বিত করার চেষ্টা করব। আমরা এখন থেকে শিখব এবং উন্নতি করব।' ম্যাচে ৫০-৫০ সব সিদ্ধান্ত ইন্টারের পক্ষে গিয়েছে বলে মনে করেছে বার্সা বস। বলেন, 'আমি রেফারি সম্পর্কে কথা বলতে চাই না, তবে ৫০-৫০ প্রতিটি সিদ্ধান্ত তাদের পক্ষে গেছে। কিছু করার নেই, আমাদের তা মেনে নিতে হবে।'
এছাড়াও ম্যাচ হারের পর কান্নায় ভেঙে পড়লেও প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত থামবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন লামিনে ইয়ামাল। ম্যাচ শেষে ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, 'আমরা সবকিছু দিয়েছি। এই বছর এটা হয়নি, আমরা ফিরে আসব। আমরা থামব না যতক্ষণ না এই ক্লাবকে প্রাপ্য স্থানে নিয়ে যেতে পারি। আমি আমার প্রতিশ্রুতি পূরণ করব এবং এটি বার্সেলোনায় নিয়ে ফিরব। আমরা এটি (শিরোপা) না পাওয়া পর্যন্ত থামব না। রবিবার আরেকটি ফাইনাল এবং আমাদের সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে। বার্সা দীর্ঘজীবী হোক।
