রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

২০ বছরের মধ্যে নিজের ৯৯% সম্পদ দান করবেন বিল গেটস

আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ১৬:২৭

আগামী ২০ বছরের মধ্যে নিজের বিশাল সম্পদের ৯৯% দান করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তিনি জানিয়েছেন, নিজ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দানকে আরও ত্বরান্বিত করা হবে। ২০৪৫ সালে এই কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) একটি ব্লগ পোস্টে বিল গেটস লিখেছেন, আমি মারা গেলে মানুষ আমার সম্পর্কে অনেক কিছু বলবে, কিন্তু আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, তাদের মধ্যে থেকে কেউ যেন বলতে না পারেন - 'তিনি ধনী অবস্থায় মারা গেছেন'।

৬৯ বছর বয়সী গেটস বলেন, তার নামকরণ করা ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন প্রকল্পে ১০০ বিলিয়ন ডলার দান করেছে। তিনি আশা করেন, আগামী দুই দশক ধরে বাজার এবং মুদ্রাস্ফীতির ওপর নির্ভর করে আরও ২০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে।

ব্লগ পোস্টে গেটস ১৮৮৯ সালে ধনকুবের অ্যান্ড্রু কার্নেগির লেখা 'দ্য গসপেল অফ ওয়েলথ' নামক একটি প্রবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যেখানে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, ধনী ব্যক্তিদের উচিৎ তাদের সম্পদ সমাজে ফিরিয়ে দেওয়া।

বিল গেটস কার্নেগির কথা উদ্ধৃত করেছেন: 'যে ব্যক্তি ধনী হয়ে মারা যায়, সে অপমানিত হয়ে মারা যায়।'

প্রাথমিকভাবে তিনি এবং তার প্রাক্তন স্ত্রী মেলিন্ডা পরিকল্পনা করেছিলেন, গেটস ফাউন্ডেশন তাদের মৃত্যুর পরেও কয়েক দশক ধরে কাজ চালিয়ে যাবে।

এই পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে গেটস বৃহস্পতিবার বিবিসির নিউজআওয়ারকে বলেন, ২০ বছরের মধ্যে আরও ধনী ব্যক্তি আসবেন, যারা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো আরও ভালভাবে মোকাবেলা করতে পারবেন।

'এটা আসলে জরুরিতার কথা। আমরা যদি চিরস্থায়ী হওয়ার চেষ্টা না করি, তবে আমরা আরও অনেক বেশি ব্যয় করতে পারি এবং আমি জানি যে, ব্যয়টি আমার মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।'

ব্লুমবার্গের মতে, বিশ্বের পঞ্চম ধনী ব্যক্তি মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা ৯৯% সম্পদ দান করলেও একজন বিলিয়নিয়ার থেকে যাবেন।

ব্লগ পোস্টে গেটস তার সম্পদের একটি টাইমলাইনও শেয়ার করেছেন। যেখানে তার বর্তমান মোট সম্পদের পরিমাণ $108 বিলিয়ন দেখানো হয় এবং একটি হাতে আঁকা তীর চিহ্ন দিয়ে ২০৪৫ সালে শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসবে বলে ইঙ্গিত করা হয়।

গেটস আরও বলেন, ফাউন্ডেশন তার মোট দান থেকে ২০০ বিলিয়ন ডলার দান করবে।

পল অ্যালেনের সাথে গেটস ১৯৭৫ সালে মাইক্রোসফ্ট প্রতিষ্ঠা করেন এবং কোম্পানিটি কম্পিউটার সফটওয়্যার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি শিল্পে একটি প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠে। গেটস এই শতাব্দীতে ধীরে ধীরে কোম্পানি থেকে সরে আসেন, ২০০০ সালে প্রধান নির্বাহী পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ২০১৪ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট এবং অন্যান্য দানশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনি অর্থ দান করতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তবে তার ফাউন্ডেশন নিয়ে কিছু সমালোচকরা বলছেন, গেটস কর এড়াতে তার দাতব্য মর্যাদা ব্যবহার করেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর এর অযৌক্তিক প্রভাব রয়েছে।

ব্লগ পোস্টে বিল গেটস তার ফাউন্ডেশনের তিনটি প্রধান লক্ষ্য তুলে ধরেছেন: মা ও শিশুদের হত্যাকারী প্রতিরোধযোগ্য রোগ নির্মূল করা; ম্যালেরিয়া এবং হামসহ সংক্রামক রোগ নির্মূল করা এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের দারিদ্র্য দূর করা।

গেটস বৈদেশিক সাহায্য বাজেট কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের সমালোচনাও করেছেন। ব্লগ পোস্টে তিনি লিখেছেন, বিশ্বের ধনী দেশগুলো তাদের দরিদ্রতম জনগণের পক্ষে দাঁড়াবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে আমরা একটি বিষয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, সমস্ত কাজে গেটস ফাউন্ডেশন মানুষ এবং দেশগুলোকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে।

নিউজআওয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি আরও স্পষ্টবাদী ছিলেন, যেখানে তিনি টেক বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্কের সমালোচনা করেছেন।

সাক্ষাৎকারে তাকে মাস্কের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের সহায়তা কাটছাঁটের মাধ্যমে 'শিশু হত্যার অভিযোগ' সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, এই কাটছাঁট কেবল শিশুদেরই নয়, লক্ষ লক্ষ শিশুর মৃত্যু ঘটাবে। আপনি আশা করেননি যে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এটি করবেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

ইত্তেফাক/এসকে