ফেনী শহরের ব্যস্ততম ট্রাংক রোডের দাউদপুর ব্রিজ-সংলগ্ন সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে বিরল প্রজাতির প্রচীন এক গাছ। এ গাছটি কোন জাতের বা বয়স কত সে সম্পর্কে জানে না স্থানীয়রা। অনেকের মতে, গাছের বয়স ৩০০ বছর হলেও আসলে এর বয়স নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ ফেনীর জনপদ বিভিন্ন নামে প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ বছরের পুরোনো। সুতরাং, গাছটির বয়স ৩০০ বছরের বেশি হতে পারে। আর এ গাছকে ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস ও ঐহিত্য।
স্থানীয়রা জানায়, ফেনী শহরের দাউদপুর এলাকায় জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে সুবিশাল প্রাচীন গাছটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দেখে আসছেন তারা। গ্র্যান্ড ট্রাংক রোডটি শেরশাহর আমলে নির্মাণ হয়েছে। তখন সড়কটি গ্র্যান্ড শেরশাহ রোড হিসেবে পরিচিত ছিল। কালের পরিবর্তনে রোডটি ট্রাংক রোড নামে পরিচিত। তখনকার সময়ে সড়কটি ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর ইউনিয়ন হয়ে জোরারগঞ্জ গিয়ে যুক্ত হয়। বর্তমানে সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত।
সরেজমিনে জানা যায়, গাছটি বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। যা পুরো জেলা জুড়ে আলোচিত। এ গাছ শুধু ফেনী নয়, আশপাশের জেলাতেও নেই। ফলে গাছটি জুড়ে সবার মধ্যে কৌতূহল বিরাজ করছে। এ গাছের জন্য ঐ স্থানটি এখন দাউদপুর বড় গাছ নামে সবার কাছে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন চৌধুরী জানান, আমার বাবা-দাদাও গাছটি এমন দেখেছেন। কিন্তু গাছটির জাত ও বয়স কিছুই আমাদের জানা নেই।
তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে এমন গাছ এখন আর কোথাও দেখা যায় না। ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও দৈনিক ফেনীর সময়-এর সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, ঐতিহাসিক নিদর্শন এ গাছটি সংরক্ষণ করা আবশ্যক। এ গাছ শুধুমাত্র অক্সিজেন দেয় না, সঙ্গে অতীতের অনেক ঘটনার সাক্ষী বহন করছে।
ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরিন কান্তা জানান, গাছটি সত্যি বিরল প্রকৃতির। এ গাছ সংরক্ষণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। ফেনী সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, গাছটি সংরক্ষণে আমরা সচেতন রয়েছি। বিভিন্ন কোম্পানি ও স্থানীয়রা গাছে পেরেক মেরে ফেস্টুন লাগানোয় গাছটিতে ক্ষতের সৃষ্টি করে ফেলেছিল। সেগুলো বন বিভাগের কর্মচারীরা তুলে ফেলেছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, প্রাচীন গাছগুলো পরিবেশ ছাড়াও ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। ঐতিহ্যবাহী গাছটি সংরক্ষণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গাছে যেন কেউ পেরেক মারতে না পারে সে জন্য গাছের আশপাশ সংরক্ষণ করা হবে। বন বিভাগ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি জানান, জেলার ফুলগাজী ও দাগনভূঞায় এমন গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। পুরো জেলায় খবর নেওয়া হচ্ছে। এমন আরো গাছ পাওয়া গেলে সংরক্ষণ করা হবে।