সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

রাজশাহীতে তীব্র তাপপ্রবাহে মানুষসহ প্রাণিকুলের হাসফাঁস

আপডেট : ১১ মে ২০২৫, ১৫:১৬

এবার চৈত্র মাসে তেমন একটা তাপপ্রবাহ অনুভব না হলেও বৈশাখের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ দেখা দিয়েছে। ফলে প্রাণিকুল ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এইদিকে ‘বৈশাখী পাকা আম’ প্রতিবছর এই সময়ে বাজারে উঠলেও এবার তেমন উঠেনি। আবার মাটি ফেটে চৌচির হচ্ছে এই উতপ্ত রোদে। ধান চাষেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। 

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ১০ মে দেশের যত অংশ জুড়ে তাপের বিস্তার- তা চলতি বছরেও দেখা যায়নি। রাজধানীতেও প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এদিন চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বচ্চ তাপমাত্রা ছিল। মাত্র একদিনের ব্যবধানে ২ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে। দেশের ৪৫টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে এই তাপপ্রবাহ। থার্মোমিটারের পারদ উঠেছে ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রীতে। হঠাৎ করে তাপপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকার টিউবয়েলেও।

এদিকে দেশের উত্তরাঞ্চল রাজশাহীর সীমান্তবর্তী বাঘা-চারঘাট উপজেলাসহ অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গরমের কারণে জনজীবন অচল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে দুস্থ দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট এখন চরমে পৌঁছেছে। অনেকেই আশা করছেন, বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টি নামবে। এরপর গরমসহ তীব্র তাপপ্রবাহও কমবে। কিন্তু সেটি হচ্ছে না সহজে। বরং দিনে উতপ্ত রোধ ও গরম পড়লেও রাতের শেষ প্রান্তে ভোর বেলা থেকে সকাল পর্যন্ত রাজশাহীর নদী বিধৌত ও সীমান্ত এলাকা বাঘা-চারঘাট ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল গুলোতে যথেষ্ট ঠাণ্ডা আবহাওয়া অনুভব করা যাচ্ছে।

অনেকেই বলছেন, দেশের জলবায়ুর কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতিতে সারাদেশেই জ্বর ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। মানুষের ঘনঘন এই রোগ হওয়ার কারণে সবাইকে বেশি বেশি পানি, ওরস্যালাইন ও লেবুর শরবত পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ডাক্তাররা। 

সরেজমিনে উপজেলার বাঘার হাটে গিয়ে দেখা যায়, মানুষ গরমে হাঁসফাঁস করছে। আড়ানীর হাটে একজন শিক্ষক গরমে অস্থির হয়ে পাশের এক দোকানে গিয়ে ফ্যানের বাতাস খাচ্ছেন। অপরদিকে টিউবয়েলে পানি না উঠায় মানুষ স্যালোমেশিনসহ যাদের বড়িতে গভির নলকুপ মটর রয়েছে, সেখানে থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। মানুষ এখন পানির জন্যে হাহাকার করছে।

বাঘার আড়ানী পৌর সভার সাবেক মেয়র শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। তীব্র গরমে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য শশা, তরমুজ, ডাব, সরবত ও কোমল পানীয় ক্রয় করতে বাজারের বিভিন্ন দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই। তার মতে, এই তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে বিদ্যুতের ঘনঘন লোডসেডিং ও লো-ভোল্টেজ। যতদিন না বৃষ্টি হচ্ছে, তার আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে ঠিকমত বিদ্যুৎ সরবরাহের জোর দাবি জানান তিনি।

সার্বিক বিষয়ে বাঘা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান (টি এইচ ও) ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, দেশের সকল হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকগুলোতে এখন রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে তীব্র গরমের কারণে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে। তার মতে, যে কোনো মূহুর্তে বৃষ্টি নামবে এটাই স্বাভাবিক। আর বৃষ্টি হলেই কমে যাবে তাপমাত্রা। তখন রোগ-বালাইও কমে আসবে।

ইত্তেফাক/কেএইচ/এনটিএম