ভারতের গুজরাট রাজ্যে আটক হওয়ার পর পশ্চিম সুন্দরবনের একটি চরে ফেলে দেওয়া ৭৮ জন ‘বাংলাভাষী’নাগরিককে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
রোববার (১১ মে) রাতে তাদের শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়। উদ্ধার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে গুজরাটের সুরাট ও আহমেদাবাদে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন তারা। তবে গত ২৬ এপ্রিল স্থানীয় প্রশাসন হঠাৎ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে এবং মারধরসহ নানাভাবে অমানবিক আচরণ করে। এরপর ৯ মে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাদের বঙ্গোপসাগরের মান্দারবাড়িয়া চরে ছেড়ে দিয়ে যায়।
আটকের পর নির্যাতনের লোমহর্ষক বিবরণ দিয়েছেন তারা। উদ্ধার হওয়া তিনজন—নড়াইলের রউফ শেখ (৭৬), শওকত শেখ (৪৫) ও খুলনার ইমরান বেপারী (৫৬)—বলেন, গুজরাটের সুরাটে তারা বস্তিতে বসবাস করতেন। ২৬ এপ্রিল রাতে পুলিশ তাদের চোখ ও হাত বেঁধে আটক করে। পরে চারদিন রাখে পুলিশ ক্যাম্পে, এরপর বিমানে করে কলকাতা এবং পরে জাহাজে করে বঙ্গোপসাগরের নির্জন চরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চোখ বাঁধা অবস্থায় চরে নামিয়ে দিয়ে বিএসএফ চলে যায়।
তারা জানান, বন্দি অবস্থায় তাদের ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতোনা, দিনের পর দিন ব্যাপক মারধর ও গালিগালাজ করা হয়েছে। চোখের সামনে নিজের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে দেখলেও কিছুই করার ছিল না তাদের।
বিএসএফ চরে নামিয়ে দেওয়ার পর প্রথমে সুন্দরবন রেঞ্জের মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় নেন তারা। বন বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি কোস্টগার্ডকে জানানো হলে রোববার বিকেলে কোস্টগার্ড সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে মংলা ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবার দেওয়া হয়। এরপর রাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
শামনগরের ইউএনও রনি খাতুন বলেন, মানবিক বিবেচনায় তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা, খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, উদ্ধার হওয়া ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন নিজেদের বাংলাদেশি বলে দাবি করেছেন। তারা নড়াইল, খুলনা, ঢাকা ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে, তিনজন দাবি করেছেন তারা ভারতের নাগরিক। তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশি দাবি করা ৭৫ জনকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে এবং ভারতীয় দাবি করা তিনজনকে থানায় রাখা হয়েছে।
পুশ-ইনের নতুন অধ্যায়:
ভারতের ‘পুশ-ইন’ কৌশল নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ের মতো এইভাবে একযোগে এতজনকে বঙ্গোপসাগরের নির্জন চরে ফেলে যাওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। গুজরাট রাজ্যের পুলিশ গত ২৭ এপ্রিল এক অভিযানে প্রায় ১,০০০ বাংলাদেশিকে আটক করে বলে দাবি করে। মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের নির্দেশে পরিচালিত ওই অভিযানে শুধু আহমেদাবাদেই ৮৯০ জন এবং সুরাটে ১৩৪ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়।
এরপর থেকেই ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে নাগরিকদের ঠেলে দেওয়ার ঘটনা বাড়তে থাকে। এই প্রক্রিয়ারই অংশ হিসেবে ৯ মে ৭৮ জনকে ফেলে যায় বিএসএফ।সুন্দরবন রেঞ্জের এসিএফ মশিউর রহমান বলেন, ভারতের জলসীমা থেকে বাংলাদেশি ভূখণ্ডে জাহাজ ও স্পিডবোটে করে তাদের ফেলে যাওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার জানিয়েছেন, তাদের জাতীয়তা ও পরিচয় যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।