সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা লালমনিরহাটের মানুষ

আপডেট : ১৬ মে ২০২৫, ১৬:৪৩

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের হরিণচড়া গ্রামের তিস্তা নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত ২ দিনে তিস্তা নদীর ডান তীরের শুধুমাত্র একটি গ্রামেই নদী ভাঙনে এ পর্যন্ত ২০টি বসতভিটা নদী গর্ভে চলে গিয়েছে। ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে আরো শতাধিক পরিবার। নদীগর্ভে চলে গেছে ৩শ বিঘা জমির ধান সবজি সহ ফসলের ক্ষেত। ভাঙ্গন আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।

ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬, ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আদর্শ পাড়া, কুঠি পাড়া, মিলন বাজার, প্রেমের বাজার এলাকা। সেই সাথে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে  খুনিয়াগাছ-রাজপুর-রংপুর যাতায়াতের একমাত্র পাকা রাস্তাটি।

হরিনচড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম জানান, তিস্তার নদীভাঙ্গন রোধে আমরা দিশেহারা। বর্তমানে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদীর স্রোত ডান দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনে কৃষি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, পাকা রাস্তা, মসজিদসহ বাজার। 

এ গ্রামটিতে প্রায় ১২ হাজার লোকের বসবাস রয়েছে। নদী-ভাঙ্গনে একেকজন ৩ থেকে ৫ বার পর্যন্ত বসতভিটা সরিয়েছেন। জমি জায়গা নদীতে বিলীন হওয়ার কারণে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এখন মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও নেই। সবকিছু হারিয়ে নি:স্ব এসব মানুষ উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের একসময় সহায়সম্বল সবকিছুই ছিল। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা স্বচ্ছল ছিল। ছিলনা অভাব অনটন কিন্তু তিস্তার বন্যা আর নদী-ভাঙ্গনে নিঃস্ব এখন এসব পরিবার। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই তাদের। ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছে নদী-ভাঙ্গনের শিকার কয়েক হাজার মানুষ।

স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকার জানান, ভাঙ্গন প্রতিরোধে এর আগে তারা নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ দিয়েছে। কিন্তু তিস্তার প্রবল পানির স্রোতে সে প্রতিরক্ষা বাঁধও ভেঙ্গে গেছে। এখানে বর্তমানে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তাই সরকারীভাবে ভাঙ্গন-রোধের ব্যবস্থার দাবী জানান তিনি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শূনিল কুমার রায় জানান, জেলায় তিস্তা নদীতে এরকম প্রায় ৪৮টি এলাকায় কম বেশি ভাঙ্গন হচ্ছে। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়নে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কিছু কিছু জায়গায় কাজ চলমান রয়েছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, বরাদ্দ পেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধে আপদকালীন জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।

ইত্তেফাক/টিএস