শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আপডেট : ১৬ মে ২০২৫, ২১:৪৯

জুলাই অভ্যূত্থানে বেঁচে যাওয়া যোদ্ধাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে ‘নির্বাণ’ শীর্ষক এক কর্মশালা হয়েছে। ‘সফরন ফাউন্ডেশন’ নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে শুক্রবার (১৬ মে) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে সকাল ১১টা থেকে দিনব্যাপী এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্শালার প্রথম পর্ব পরিচালনা করেন: মালয়েশিয়ার হেলথ্ ইকুইটি ইনিশিয়েটিভ-এর ক্লিনিক্যাল সুপারভাইজার জোহরা পারভীন, ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আজিজুল ইসলাম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক তালুকদার ও প্রভাষক রাইহানা শারমিন। 

দ্বিতীয় পর্বে ‘ইনস্পায়ার এন্ড রাইজ’ সেশনে আলোচনা করেন- এডিএন টেলিকমের চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদ, পেপার রাইম অ্যাডভারটাইজিং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ জেড এম সাইফুদ্দিন, উইমেন রাইটস্ এক্টিভিস্ট ব্যারিস্টার মিতি ফারজানা ও বিডিজবস্-এর পরিচালক প্রকাশ রায় চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংস্থার নির্বাহী সদস্য কাজল আব্দুল্লাহ্। 

সফরন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সৌমিক পি দত্ত জানান, দিনব্যাপী কর্মশালায় ট্রমা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের ৩৫ জন অংশীজন অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে আহতরা এখনও বড় ধরনের ট্রমার মধ্যে আছেন। তাদের শারিরীক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসার দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। কর্মশালায় যারা অংশগ্রহণ করছেন, আশা করা যায়, তারা নিজেরাই নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে সক্ষম হবেন। 

আয়োজকদের মতে, বৈষম্যমুক্ত ও শোষাহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আত্মত্যাগী তরুণদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করাই এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য। তাদের জন্য এমন সহায়তা ও পুনর্বাসনমূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, যেন তারা আবারও স্বপ্ন দেখতে পারে, গড়ে তুলতে পারে এক নতুন বাংলাদেশ।

এডিএন টেলিকমের চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আপনারা অসম্ভব সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। যেটা আমরা সারাজীবনেও করতে পারিনি, সেটা আপনার করে দেখিয়েছেন। এরশাদের সময়ও আমরা আন্দোলন করেছিলাম, তবে এবারের মতো বিভৎস পরিস্থিতি এর আগে কখনো হয়নি। আপনাদের মধ্যে একটি বড় জনশক্তি এখন ভুক্তভোগী। এ অবস্থান থেকে আপনারা এগিয়ে যাবেন বলে আমরা আশা করি।

নারী অধিকার কর্মী ও লেখক ব্যারিস্টার মিতি সানজানা বলেন, আমার সাথে অনেকের দেখা হচ্ছে, যারা মানসিক ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনের সময় নারীদের মধ্যে আমরা প্রমিনেন্ট ফেইস হিসেবে দেখেছি, পরবর্তীতে তাদের আর সামনে আসতে দেখা যাচ্ছে না। তাদের গ্রেট দেয়া হচ্ছে। সেই ট্রমাটা তারা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেন নি। নিজেদের আত্ম উন্নয়ন করতে পারলে আমরা আরো উন্নত হয়ে উঠবো ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ বলেন, আমাদের ধনীরা, অভিজাতরা পরবর্তী প্রজন্মের কথা চিন্তা করেনি। আমাদের সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠীকে তারা নষ্ট করে দিয়েছে। এখন আমরা বৈশ্বিক নাগরিক হয়ে উঠেছি, আমাদের ক্রাইসিসগুলো আমাদের মতো করে চিন্তা না করে গ্লোবালি চিন্তা করি। তাহলে আমাদের সমস্যা সমাধান অনেক সহজ হয়ে যাবে। পৃথিবী অনেক বড়। ২৪ এর বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা যে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পেরেছি, তা সত্যিকারার্থে পৃথিবীর অনেক জাতির পক্ষে ঘটে না। আমরা তোমাদের পরিবর্তনের স্বপ্নসারথী। সেই পরিবর্তনের সাথে আমরা থাকতে চাই।

বিডিজবসের পরিচালক প্রকাশ রায় চৌধুরী বলেন, আমরা যা করেছি, তা দেশের জন্য করেছি, জাতির জন্য করেছি। এখান কোথাও কোন ভুল হয়ে তা আমাদের দায় না। এ সিস্টেমকে যারা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের দোষ। তারা ঠিকভাবে এগিয়ে নিতে পারেন নি।
ক্লাউড সিস্টেম লিমিটেডের সিইও মোস্তফা মাহমুদ হোসেন বলেন, আপনাদের সাহস আছে, লড়াই করতে পারেন। এটা আপনাদের সফটও্যার। এমন অনেক সফটও্যার জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছে। এরকম মানুষের মধ্যে যত সফটও্যার আছে, সবগুলোকে আপডেট করতে হবে।

এর আগে গত গত ২৭ ফেব্রুয়ারিও অনুরূপ এক কর্মশালার আয়োজন করেছিল সফরন ফাউন্ডেশন। সেখানেও অংশগ্রহণ করেছিলেন ৩০ জন জুলাইযোদ্ধা।

ইত্তেফাক/এএইচপি