সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

তিস্তার পানিতে ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন

আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ১৭:৫৩

তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় ভেসে গেছে চরের কৃষকদের স্বপ্ন। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে বর্গাচাষ, ধার-দেনা আর স্বপ্নের বিনিময়ে চাষ করা বাদামসহ রবিশস্য এখন পানির নিচে। চোখের সামনে ফসল তলিয়ে যেতে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি অনেক কৃষক।

থেতরাই ইউনিয়নের বাদাম চাষি আলী আকবর বলেন, “অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বাদাম চাষ করেছিলাম, এখন সব ডুবে গেছে। এই দেনা এখন কীভাবে শোধ করবো?” কথা বলার সময় চোখে জল আটকে রাখতে পারেননি তিনি।

উলিপুরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবে গেছে বাদাম ক্ষেত। ছবি: ইত্তেফাক

তিস্তার পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় পুরো চরজুড়ে বাদাম, পাট, ভুট্টা, কাউন, মুগডাল, মরিচ, শাকসবজি—সব রবিশস্য তলিয়ে গেছে। সরেজমিনে থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়নের চরে গিয়ে দেখা যায়, অনেক কৃষক বৃষ্টিতে ভিজে কাঁচা বাদাম তুলে ঘরে ফিরছেন হতাশ হয়ে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে ২৩০ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম, ৪০০ হেক্টর জমিতে পাট এবং অন্যান্য শস্য মিলে আরও প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছিল। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে তিস্তার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব ফসলের অধিকাংশই পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

উলিপুরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবে গেছে বাদাম ক্ষেত। ছবি: ইত্তেফাক

থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার চরের চাষি লাল মিয়া, ফরিদ শেখ, আলী আকবর, নিলুফার, রফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, হোসেন আলী, সুরুজ্জামান ও দলু শেখ—সবাই তাদের জমির ফসল হারিয়ে এখন দিশেহারা। তারা বলেন, “স্বপ্ন ছিল বাদাম বিক্রি করে লাভবান হবো। এখন তো সব শেষ। ধারদেনার টাকা শোধ করবো কীভাবে? সংসারই বা চলবে কেমন করে?”

দলদলিয়া ইউনিয়নের আরেক চাষি শুকাব্বর বলেন, “জীবনে এমন ক্ষতি আর দেখিনি। কথায় বলে, ‘সব হাড় গিয়েছে’। এখন বসে থাকলেও উপায় নেই।”

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোশাফে হোসেন জানান, তিস্তার পানিতে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় দুই হেক্টর বাদাম ক্ষেত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

ইত্তেফাক/আইএ