রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষকের কক্ষে আপত্তিকর অবস্থায় এক ছাত্রী শিক্ষার্থীদের হাতে ধরা পড়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ও তার ছাত্রীকে তাৎক্ষণিক জিম্মি করে ভিডিও প্রকাশ না করার শর্তে সাড়ে ৩ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ক্যাম্পাসের দুই সাংবাদিকসহ চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে শনিবার (১৭ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে উভয়পক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে দুই সাংবাদিক চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করলেও ঐদিন সন্ধ্যার দিকে শিক্ষকের সাথে টাকা লেনদেনের বিষয়ে আলোচনার একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকেই অভিযুক্তরা আত্মগোপনে আছেন।
ওই শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। অন্যদিকে এ ঘটনায় আলোচিত ছাত্রী একই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরের (এমবিএ) শিক্ষার্থী। তার বিরুদ্ধে ওই শিক্ষকের সঙ্গে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করে বিভাগে সর্বোচ্চ রেজাল্ট করে বিভাগে দ্বিতীয় হওয়ার অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে অভিযুক্ত ক্যাম্পাসের দুজন সাংবাদিক হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) এর যুগ্ম সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন সজীব ও খবরের কাগজের প্রতিনিধি ও রাবিসাসের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম সুমন। অন্য দুই শিক্ষার্থী হলেন- আইবিএ’র শিক্ষার্থী ও সাবেক সহসমন্বয়ক আতাউল্লাহ। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব। আতাউল্লাহ ও নাজমুস সাকিব কোন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। এই ঘটনার পর শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিব হোসেনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
শনিবার বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, স্যার একটু ব্যস্ত থাকায় আমি বিকালের দিকে পড়া বুঝতে গিয়েছিলাম। তখন সন্ধ্যা হয়ে যায়। এ সময় হঠাৎ কয়েকজন স্যারের চেম্বারে নক করে। পরে স্যার দরজা খুলে দেন। রুমে ঢুকে তারা প্রথমে আমার গায়ে হাত দিলে আমার গা থেকে ওড়না পড়ে যায়। তারা আমাকে ধর্ষণ করার হুমকি দেয়। তখন তারা মোবাইলে ভিডিও করার কথা বললে আমি টেবিলের নিচে গিয়ে লুকাই। পরে এখান থেকে বের হই। তখন তারা প্রথম ৫ লাখ টাকা দাবি করে। স্যার আমার নিরাপত্তার ভয়ে একপর্যায়ে টাকা দিতে রাজি হয়। তাৎক্ষণিক স্যারের মানিব্যাগ থেকে আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হয় এবং চেম্বার থেকে বের হয়ে এক লাখ টাকা এনে দেন। পরেরদিন তাদের আরও দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে অভিযুক্ত দুই সাংবাদিক বলেন, ওই শিক্ষার্থীর গায়ে আমরা হাত দেইনি। অভিযুক্ত শিক্ষক ও ছাত্রী কর্তৃক আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। যেখানে আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর গুজব ছড়ানো হয়েছে। আমাদের সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়নি। .
এইদিন বিকালে অভিযুক্তদের একজন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিবের সঙ্গে শিক্ষকদের টাকা লেনদেনের আলোচনার একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
সেখানে শিক্ষক বলেন, আপনাদের কী কথা আছে বলেন? দেখা করি তাহলে। আপনারা কয়জন আসবেন? রিফাত একাই আসার কথা বললে তিনি বলেন, না, আপনারা ৪ জনই আসেন। আপনারা তো টাকা নিবেন আমার কাছ থেকে। ৪ জন থাকা ভালো না? পরে অন্যরা বলবে যে, আমি পাইনি। ক্যাম্পাসে আমার রুমেই আসেন। পরে যদি বাকি তিনজন বলে সাকিব আমাদের টাকা দেয়নি। তখন আপনি কি করবেন? আমি ইতোমধ্যে আমার গাড়িটা বন্ধক রাখার কথা বলেছি। সেখান থেকে আমি টাকা পাবো। আমার কাছে তো টাকা নেই।
তখন রিফাত বলেন, স্যার, আমরা ৪ জন একসঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাচ্ছি না। শিক্ষক বলেন, আপনার কী ধারণা যে আমি আপনাদের ৪ জনকে আটকিয়ে রেখে দিবো?
উত্তরে রিফাত বলেন, যখন ওই রুম থেকে দুইজন বের হয়ে গেছে। আমরা তখন দুইজন ছিলাম। আমাদের দুইজনের সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে? উত্তরে শিক্ষক বলেন, অবশ্যই হয়েছে আমি অন্য দুইজনকেও ডেকেছিলাম। তারা আসেনি। তখন রিফাত বলেন, আসেনি। মানে, আমরা দুইজনই ফাইনাল। বাকিদের দায়িত্ব আমাদের। আপনি আসেন আপনার সাথে দেখা করি।
এ বিষয়ে ওই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। তদন্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।