শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ক্ষমতার সাথে নীতির নেগোসিয়েশন ইশরাক ভাইয়ের মানায় না: সারজিস

আপডেট : ১৯ মে ২০২৫, ১৭:৩২

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (পশ্চিমাঞ্চল) সারজিস আলম। এ সময় তিনি পুলিশের হাত থেকে ইশরাকের নিজ কর্মীদের উদ্ধারের একটি ঘটনাও তুলে ধরেন। বিকেল ৪টার দিকে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসটি ইত্তেফাকের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

জাতীয় নাগরিক পার্টির পশ্চিমাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস লিখেছেন, ‘ইশরাক ভাইকে আমি চিনতাম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে হিসেবে। যেদিন হাসিনার পুলিশের হাত থেকে বুক চিতিয়ে নিজের কর্মীকে ছিনিয়ে আনলেন সেদিন থেকে ইশরাক ভাইকে আমি তার পরিচয়ে চিনি, রাজনীতিবিদ হিসেবে চিনি। তার সাথে একাধিকবার কথা হয়েছে। গতানুগতিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা বাংলাদেশের পার্সপেক্টিভে বিএনপির মত বড় রাজনৈতিক দলের অন্য দশ জন নেতার মতো গতানুগতিক চিন্তাধারার মনে হয়নি।’

ইশরাক দলের বক্তব্যের সাথে না মিললেও অনেক ক্ষেত্রেই সত্যটাকে অকপটে স্বীকার করেছেন জানিয়ে সারজিস লিখেছেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে এই প্রজন্মের যারা আছেন তাদের থেকে সময়ের, জনগণের এবং আমাদের প্রত্যাশাটা অন্যদের তুলনায় বেশি। ইশরাক ভাই তাদের মধ্যে অন্যতম।’

সারজিস আরও লেখেন, ‘বিএনপি তাদের জায়গা থেকে অসংখ্য বার বলেছে এবং এটাই সত্য যে বিগত তিনটা জাতীয় নির্বাচন এবং অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনগুলো ছিল একপাক্ষিক, প্রশ্নবিদ্ধ এবং অবৈধ। যে নির্বাচন অবৈধ, সেই নির্বাচনের মেয়র আমি কিভাবে হতে চাই? সেটা কিভাবে বৈধ হয়? তাহলে তো সেই নির্বাচনকে আমি বৈধতা দিয়ে দিচ্ছি। তাহলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে শুধু ইশরাক ভাই কেন, সকল জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন, ওয়ার্ড এবং সংসদীয় আসনে সবাইকে তাদের জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। মেয়র হয়ে সাময়িক ক্ষমতার ব্যবহার করা, সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা; এসবের দিকে তাকিয়ে সামান্য কয়েক দিনের জন্য একটা চেয়ারে বসে অবৈধ নির্বাচন গুলোকে ইশরাক ভাই যদি বৈধতা দেন তাহলে এটি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একটি কালো দাগ হয়ে থাকবে।’

সারজিস বিশ্বাস করেন, ইশরাক তার গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তায় এই মাইলস্টোনগুলো ধীরে ধীরে অর্জন করে নিতে পারবেন। কিন্তু সাময়িক প্রাপ্তির আশায় অবৈধ নির্বাচনের সো-কল্ড বৈধ মেয়র হিসেবে বসে তিনি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এত বড় একটি দাগ লাগাবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত তারই নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির পশ্চিমাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

তিনি লেখেন, ‘একটি বিষয় বিচারাধীন প্রক্রিয়ায় থাকাকালীন স্থানীয় নেতাকর্মীদেরকে দিয়ে নগর ভবনের সামনে এর চেয়ে কয়েকগুণ বড় বিক্ষোভ কিংবা অবস্থান কর্মসূচি এখন যেমন করছেন, আগামীতেও তিনি করতে পারবেন। সেই তুমুল জনপ্রিয়তা তার আছে।  কিন্তু এই জনপ্রিয়তাকে তিনি অপরাধের বৈধতা উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারেন না। তার সাথে এটা যায় না।’

সারজিসের স্ট্যাটাসে উঠে এসেছে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কথাও। স্ট্যাটাসে তিনি জানান, ‘উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কথা চিন্তা করে না হোক অভ্যুত্থানের সামনের সারির আপোষহীন একজন নেতৃত্ব ও যোদ্ধার কথা চিন্তা করে হলেও তার স্থানীয় কিছু কর্মীদের মাধ্যমে তিনি আসিফ মাহমুদকে এভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করাতে পারেন না, অপমানিত করাতে পারেন না, গালিগালাজ করাতে পারেন না, বাবা-মা তুলে কথা বলাতে পারেন না। এটা কখনোই রাজনৈতিক শিষ্টাচারপন্থী না। পরোক্ষভাবে এই দায় তার উপরেও বর্তায়।’

সারজিস বলেন, ‘যারা আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি তারাই যদি বিগত অবৈধ নির্বাচন গুলোকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নিজেদের সক্ষমতার অপব্যবহার করে তাহলে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমায় ঐতিহাসিক দায় তৈরি করবে। ইশরাক ভাই সেই দায় সারাজীবনের জন্য বহন করবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে।’

স্ট্যাটাসের একদম শেষে সারজিস লিখেছেন, ‘আমরা তাকে ব্যক্তিত্বের আনকম্প্রোমাইজ জায়গা থেকে যে উচ্চতায় প্রত্যাশা করি, এসব গতানুগতিক কালচার পলিটিক্সের কারনে সেটা তিনি নির্দ্বিধায় হারাবেন। রাজনৈতিক দীর্ঘ পথ চলার প্রারম্ভেই ক্ষমতার সাথে নীতির নেগোসিয়েশন সাদেক হোসেন খোকার উত্তরসূরীর মানায় না, ইশরাক ভাইয়ের মানায় না।’

ইত্তেফাক/এটিএন